নতুন বছর সবার মধ্যেই নিয়ে আসে আনন্দ, উত্তেজনা। ইচ্ছা জাগায় পুরানো স্বপ্ন, জমিয়ে রাখা শখগুলো নতুন উদ্যমে পূরণ করার। সবকিছু অশুভ, খারাপ লাগাকে দূর করে শুধু খুশির মনোভাব এনে দেয় নতুন বছরের আগমন।
নতুন বছরকে শুভেচ্ছা জানাতে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন ঘড়িতে ১২টা বাজবে। ১২টা বাজার পরপরই সমস্বরে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলে, আতশবাজি দিয়ে রাতের আকাশ রাঙিয়ে, প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। বছরের পর বছর ধরেই এই রীতি চলে আসছে।
বিশ্বজুড়ে নতুন বছরের উদযাপন চলে আসছে। এই উদযাপন দেশভেদে আবার কিছুটা ভিন্ন। একেক দেশ তাদের নিজস্ব কিছু উদযাপনের ধারা তৈরি করেছে। আবার কিছু রীতি একেবারেই ভিন্ন। এই বছরও তার ব্যাতিক্রম নই। গ্ল্যামর থেকে নেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের কিছু উদযাপন।
আমেরিকা
নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদযাপন হলো ‘টাইমস স্কয়্যার বল ড্রপ’। প্রতিবছর সকল আমেরিকান তাদের টিভির সামনে বা সরাসরি টাইমস স্কয়্যারে চলে আসে এই উদযাপন দেখার জন্য। ‘ওয়ান টাইমস স্কয়্যারে’ (বর্তমানে টাইমস স্কয়্যার) ১৯০৭ সাল থেকে শুরু হয় বল ড্রপের এই রীতি। এই বল ড্রপ মূলত একটি কাউন্টডাউন। ঘড়ির কাটা মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেই শুরু হয় কাউন্টডাউন। কাউন্টডাউন শেষে আতশবাজি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় নতুন বছরের।
ফ্রান্স
ফরাসিরা ওয়াইন পানের জন্য বিখ্যাত। এবং নিউ ইয়ারে এইটা আরো বৃহৎভাবে হয়ে থাকে। ফরাসিরা শ্যাম্পেইন দিয়ে তাদের নতুন বছর উদযাপন করে। প্রচুর নাচানাচি, পার্টি দিয়ে তাদের এই উদযাপন হয়। যদিও উদযাপন শ্যাম্পেইন দিয়েই হয় কিন্তু খাবারের তালিকা ঠিকই একইরকম থাকে যা হলো টার্কি, ঝিনুক, হাঁস, কর্নিশ মুরগি এবং স্পার্কেল ওয়াইন।
ফিলিপাইন
ফিলিপাইনে নিউ ইয়ার উদযাপন হয় ১২টি গোলাকার ফল দেওয়ার মাধ্যমে। পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করে সবাই যেন ১২টি করে গোলাকার ফল যেমন আপেল, আঙুর, কমলা পায়। এই গোলাকার ফল কয়েন অর্থাৎ অর্থকে ইঙ্গিত করে। তাদের কাছে ১২ হলো শুভ নাম্বার এবং এই ১২টা ফল বছরের ১২টা মাসকে নির্দেশ করে। ফিলিপিনোরা বিশ্বাস করে এই ফল দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সমৃদ্ধি আসবে।
কানাডা
কানাডিয়ানরা তাদের নতুন বছর উদযাপন করে তাদের শীতকালীন প্রিয় খেলা ‘আইস ফিশিং’ দিয়ে। গ্লোবাল নিউজের তথ্যমতে তারা গরম ঘর এবং রান্নার সরঞ্জাম ভাড়া করে যেন তারা খেলার স্থানেই পরিবারের সাথে নতুন বছরের উদযাপন উপভোগ করতে পারে।
ব্রাজিল
ব্রাজিলিয়ানরা সমুদ্রে লাফ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের নতুন বছর উদযাপন করে। হাডসন বোর, ব্রাজিলিয়ান ফটোগ্রাফার, বলেন ‘ব্রাজিলে সবাই সাধারণত সমুদ্র সৈকতে যায় এবং মধ্যরাতের পরেই সবাই সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়ে। সবাইকে সাতটা ঢেউ এর উপর লাফ দিতে হয় এবং প্রতিটি ঢেউয়ে একটি করে ইচ্ছাপোষণ করতে হয়। এবং এই লাফ দেওয়ার সময় সবাইকে সাদা রঙের পোষাক পরিধান করতে হয়।’
ব্রাজিলিয়ানদের সমুদ্রে লাফ দেওয়া রীতি মুলত এসেছে জ্বলের দেবী ইয়েমানজাকে শ্রদ্ধা প্রদান করা থেকে।
স্পেন
স্প্যানিশরা তাদের নতুন বছর শুরু করে ১২টি আঙ্গুর খাওয়ার মাধ্যমে যা ঘড়ির কাটাকে নির্দেশ করে। এই রীতিকে বলা হয় লাস দসে উবাস দে লা সুয়েরতে যার অর্থ দাড়ায় ১২টি শুভ আঙুর। এই প্রথা শুরু হয় ১৯ শতকে, এই বিশ্বাসের সাথে যে এটি অশুভ জিনিসকে দূর করে সমৃদ্ধি এবং ভালো ভাগ্য আনবে। এই ১২টি আঙুর খেতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, ঘড়ির কাটা ১২টা ছেড়ে যাওয়ার আগেই আঙুরগুলো শেষ করতে হবে নতুবা এই প্রথা কাজে দেবে না।
জাপান
জাপানিজরা নিউ ইয়ার উদযাপন করে ‘সোবা নুডলস’ খাওয়ার মাধ্যমে। এই রীতি চলে আসছে কামুকুরা সময় থেকে। সে সময়ে বৌদ্ধ মন্দিরগুলো দুঃস্থদের মধ্যে এই নুডলস বিতরণ করতো। বর্তমানে এই নুডলস খাওয়া হয় পুরাতন বছরকে পিছনে ফেলে আসার জন্য।
ডেনমার্ক
ডেনমার্কে নিউ ইয়ার উদযাপন করা হয় পুরাতন প্লেট ভাঙ্গার মাধ্যমে। কিন্তু এই প্লেট ভাঙ্গার নিয়ম প্রচলিত নিয়ম থেকে একটু ভিন্ন। এইখানে প্লেট প্রিয়জনের দিকে ছুড়ে মারা হয় এবং বিশ্বাস করা হয় এতে তার মঙ্গল হবে।
গ্রীস
গ্রীসের মানুষজন বিশ্বাস করে যে পিঁয়াজ শুধু রান্নার জন্যেই উপকারি না। নতুন বছরে ভালো ভাগ্য বয়ে আনতেও এই পিঁয়াজ কাজে দেয়। এই জন্যই তারা তাদের দরজার সামনে পিঁয়াজ ঝুলিয়ে রাখে নতুন বছরের উদযাপন হিসাবে। এই পিঁয়াজ ঝুলানো হয় নতুন বছরে চার্চের কাজ শেষ হওয়ার পরে।
কলম্বিয়া
কলম্বিয়ানরা নতুন বছর উদযাপন করে বিছানার নিচে তিনটা আলু রেখে। এই প্রথাকে তারা বলে আগ্যিয়েরো প্রথা। এই প্রথা অনুযায়ী পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের বিছানার নিচে তিনটা করে আলু রাখা হয়। একটা আলু থাকবে খোসা ছাড়ানো, একটা খোসাসহ আলু, এবং একটা খন্ড করে কাঁটা আলু। মধ্যরাতে প্রত্যেকেই চোখ বন্ধ করে একটা আলু নেবে যা তাদের নতুন বছর কেমন যাবে সেইটা নির্দেশ করবে। যেমন: ভালো ভাগ্য, আর্থিক সংকট, এবং এই দুইটার মিশ্রণ।
উদযাপনের রীতি যেমনই হোক না কেন উদ্দেশ্য সবার একটাই। নতুন বছর যেন ভালো কিছু বয়ে আনে। নতুন বছর নতুন প্রত্যাশার এবং আশার সঞ্চার ঘটায়। সেই প্রত্যাশা থেকেই বিশ্বের সবখানে সবাই মিলিত হয়ে নতুন বছর উদযাপন করে এবং সমস্বরে এর শুভেচ্ছা জানায়। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’।
সুরাইয়া ফাতিমা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত।