একের পর এক অঘটন কিংবা ‘ডার্ক হর্স’দের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জমে উঠেছে কাতার বিশ্বকাপ। যদিও ইতোমধ্যে শেষ ১৬ নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স, ব্রাজিল আর পর্তুগাল, বাকিদের জন্য অপেক্ষা করছে নানামুখী সমীকরণ আর যদি/কিন্তু।
আজকের ম্যাচগুলো থেকেই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ‘নকআউট’ শুরু হচ্ছে বলা চলে। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক পরের রাউন্ডের সমীকরণ।
গ্রুপ ‘এ’
এই গ্রুপ থেকে স্বাগতিক কাতার ইতোমধ্যেই বাদ পড়েছে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে। কিন্তু নেদারল্যান্ড ও ইকুয়েডরের ৪ পয়েন্ট এবং সেনেগালের ৩ পয়েন্ট বাঁচিয়ে রেখেছে শেষদিনের নাটকীয়তা।
আজকে রাতে কাতারের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ড, তাই বলা চলে ডাচরাই রয়েছে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে। কাতারের বিপক্ষে ড্র’ই নিশ্চিত করবে পরের রাউন্ড, যদিও ডাচদের লক্ষ্য হবে সহজ প্রতিপক্ষকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে সেনেগাল বনাম ইকুয়েডরের খেলাটি আক্ষরিক নকআউট; জয়ী দল খেলবে পরের রাউন্ড। যদি ড্র হয়, তাহলে বাড়ি ফিরতে হবে ইকুয়েডরকে।
মজার ব্যাপার হলো, এই গ্রুপ থেকে এখনো পর্যন্ত নেদারল্যান্ডেরও বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তারা কাতারের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায়, সেক্ষেত্রে একটি ড্র’ই যথেষ্ট সেনেগাল এবং ইকুয়েডর উভয়কে পরের রাউন্ডে নিয়ে যাবার জন্য।
গ্রুপ ‘বি’
ইংল্যান্ডের পরবর্তী রাউন্ড মোটামুটি নিশ্চিত মনে হলেও ইরান বনাম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ নিয়ে পারদ চড়েছে তুঙ্গে। আর এটি কেবল দুই দেশে রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্যই নয়, বরং গ্রুপে তাদের অবস্থানের জন্যও। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জয় আবশ্যক, তবে ড্র করলেই ইরান চলে যাবে পরের রাউন্ডে।
একটু ‘কিন্তু’র অবকাশ রয়েছে এখানে। যদি ওয়েলস হারিয়ে দেয় ইংল্যান্ডকে, সেক্ষেত্রে ড্র করলে চলবে না ইরানের, শেষ ১৬ তে যেতে হবে জিতেই। ইংল্যান্ডের হিসাব সহজ, আজকের ম্যাচে না হারলেই শেষ ১৬ নিশ্চিত হচ্ছে তাদের।
গ্রুপ ‘সি’
সমীকরণ জমেছে গ্রুপ ‘সি’তেও, এখনো পর্যন্ত রাস্তা খোলা সব দলের জন্যই। আর্জেন্টিনার সামনে জয়ের বিকল্প নেই সরাসরি পরের রাউন্ডে খেলতে হলে। যদি পোল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে লিওনেল মেসির দল, সেক্ষেত্রে পোল্যান্ড চলে যাবে শেষ ১৬ তে এবং আর্জেন্টিনার চেয়ে থাকতে হবে অপর ম্যাচের ফলাফলের দিকে। অপর ম্যাচে সৌদি আরবের মেক্সিকোর কাছে হারতে হবে এবং সেটিও হতে হবে কম গোল ব্যবধানে।
অবশ্য মেক্সিকোর জয়ও বিপদ ডেকে আনতে পারে আর্জেন্টিনার জন্য যদি তা বড় জয় হয়। মেক্সিকোর জন্য তাই রাস্তাটা কঠিনই। আর্জেন্টিনার হার/ড্র এর পাশাপাশি তাদেরও করতে হবে গোল উৎসব, অন্তত ৪-০ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। যদি আর্জেন্টিনা তাদের খেলায় ১-১ বা ২-২ গোলে ড্র করে, সেক্ষেত্রে গোলের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে মেক্সিকোর। তবে সৌদির জন্য একটি জয়ই যথেষ্ট সব সমীকরণ পাশ কাটিয়ে নকআউটে চলে যেতে।
গ্রুপ ‘ডি’
ফ্রান্স এই গ্রুপ থেকে ইতোমধ্যে পরের রাউন্ডে চলে গেছে। অস্ট্রেলিয়া তাদের নিজেদের ম্যাচে জয় লাভ না করলে ফ্রান্স তাদের শেষ খেলায় হেরে গেলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন থেকে যাবে। তবে ফ্রান্স হেরে গেলে কপাল পুড়তে পারে অস্ট্রেলিয়ার যদি তারা ডেনমার্কের সাথে ড্র করে। সেক্ষেত্রে গোল ব্যবধানে পরের রাউন্ডে চলে যাবে তিউনিসিয়া।
ডেনমার্কের কাছে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। জিতলেই তারা পরের রাউন্ড খেলবে। কেবল জিতলেই হবে না, আশায় থাকতে হবে তিউনিসিয়াও যেন জয় বঞ্চিত হয়। তিউনিসিয়ার জন্যই রাস্তাটা সবচেয়ে কঠিন। নিজেদের খেলায় ফেভারিট ফ্রান্সকে হারানোর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ডেনমার্কের ম্যাচটিতে সমতাই কেবল তাদের নিয়ে যেতে পরে শেষ ১৬’তে।
গ্রুপ ‘ই’
‘ই’ গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে এক পা দিয়েই রেখেছে স্পেন। শেষ ম্যাচে জাপানের সাথে ড্র করলেই হচ্ছে তাদের। হেরে গেলেও সমস্যা হবার কথা নয় যদি না হারের ব্যবধান ৮ গোল বা তার বেশি হয়!
জাপানের সামনেও সুযোগ রয়েছে স্পেনকে হারিয়ে পরের রাউন্ডে যাবার। তবে ড্র হলেই জটিল হবে সমীকরণ। সেক্ষেত্রে আশা করতে হবে জার্মানি যেন তাদের খেলায় ড্র করে কিংবা হেরে যায়। তবে জার্মানি জিতে গেলেও জাপানের সুযোগ থাকবে যদি জয়ের ব্যবধান হয় এক গোল।
জার্মানির কেবল জয় দিয়েই হবে না, গ্রুপের অপর খেলায় স্পেনের জয়ও কামনা করতে হবে। যদি স্পেন আর জাপানের খেলাটি ড্র হয়, সেক্ষেত্রে জার্মানিকে কোস্টারিকার জালে গুনে গুনে আটবার বল জড়াতে হবে পরের রাউন্ডে যেতে হলে।
কোস্টারিকা জিতে গেলেই পরের রাউন্ডে চলে যাবে। ড্র করলে জাপানের হারের উপর নির্ভর করতে হবে।
গ্রুপ ‘এফ’
ক্রোয়েশিয়া এবং মরক্কো উভয় দলই একটি জয় বা ড্র’র কল্যাণে যেতে পারবে পরের রাউন্ডে। অবশ্য ক্রোয়েশিয়া যদি বেলজিয়ামকে হারিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে নিজেদের খেলায় হেরে গেলেও নকআউট খেলবে মরক্কো, যদি গোল ব্যবধান বেশি না হয়।
বেলজিয়ামের জন্য জয় আবশ্যক। তবে মরক্কো নিজেদের খেলায় হেরে গেলে ড্র’ই যথেষ্ট হবে রেড ডেভিলদের।
গ্রুপ ‘জি’
বিশ্বকাপের অন্যতম কঠিন গ্রুপ ধরা হচ্ছিল এই গ্রুপটিকে। ব্রাজিল ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে তাদের শেষ ১৬’র টিকিট। সুইজারল্যান্ড নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতলেই নিশ্চিত করে ফেলবে নকআউট রাউন্ড। ড্র হলে আশা করতে হবে ক্যামেরুনের কাছে ব্রাজিলের হার।
ক্যামেরুনের জন্য আপাতত কোনো আশা নেই বললেই চলে। ব্রাজিলকে হারানোর পাশাপাশি তাদের আশা করতে হবে সুইসরা যেন নিজেদের ম্যাচে কোনো পয়েন্ট না পায়। অন্যদিকে সার্বিয়ার একমাত্র সুযোগ সুইজারল্যান্ডকে হারানো এবং গোল ব্যবধান কমপক্ষে ২ হওয়া।
গ্রুপ ‘এইচ’
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে শেষ ১৬। ঘানা নিজেদের খেলায় জিতে গেলে তারাও চলে যাবে পরের রাউন্ডে। ড্র হলে আশা করতে হবে পর্তুগাল যেন হেরে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে।
আবার ঘানা ড্র করলে এবং দক্ষিণ কোরিয়া পর্তুগালকে হারিয়ে দিলে কোরিয়ানদেরও সুযোগ থাকবে নকআউটে খেলার। সেক্ষেত্রে পর্তুগালকে হারাতে হবে অন্তত ২ গোলের ব্যবধানে।
উরুগুয়ের জন্য নিজেদের খেলায় জেতার পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার হার কাম্য। অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়া জিতে গেলেও উরুগুয়ে জেতে পারবে শেষ ১৬’তে। সেক্ষেত্রে কোরিয়ার চেয়ে ১ গোল বেশি ব্যবধানে জিততে হবে ভালভার্দে-কাভানিদের।