বিমানের একটি বোয়িং উড়োজাহাজ ‘অরুণ আলো’তে প্রায় ১২ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে দুটি আসনের তলা থেকে ১ কেজি ৮৫০ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার করেছেন ঢাকা কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা। বারগুলো সিটের নিচে পাইপের ভেতরে রাখা হয়েছিল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান শেষ হয় রাত ১০টার দিকে। ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেন্টিভ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) জেবুনন্নেছা জানান, দীর্ঘ তল্লাশির পর সিটের নিচ থেকে ১১৬টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা জানান, বিমানের ফ্লাইটটি সকাল ৬টা ৩৮ মিনিটে দুবাই থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আগে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর তল্লাশির জন্য উড়োজাহাজটিকে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার গেটে নেওয়া হয়।
সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে বিমানের ইকোনমি ক্লাসের ১৭ জে ও ১৯ জে আসনের নিচে পাইপের ভেতর বিশেষভাবে রাখা অবস্থায় পাওয়া যায় সোনার বারগুলো।
ওই অভিযানে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাঁকা উড়োজাহাজে যাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে, এমন রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী ছাড়া কারও পক্ষে ওই জায়গায় স্বর্ণ রাখা সম্ভব নয়।
“এর আগেও উড়োজাহাজের বাথরুম, সিট বা গারবেজের (আবর্জনা রাখার স্থান) বিশেষ কম্পার্টমেন্ট থেকে স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছে। পরবর্তীতে আর জানা যায় না, এসব স্বর্ণ কে ওখানে রেখেছিল।”
এক সপ্তাহ আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর আবুধাবি থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসা বিমানের আরেকটি বোয়িং ‘আকাশ বীণা’র টয়লেটের ছাদ থেকে ১১৬টি (৪ কেজি)সোনার বার উদ্ধার করা হয়।
কাস্টমসের এক কর্মকর্তার ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানের টয়লেটের ছাদের স্ক্রু খুললে প্যানেলটি নিচে নেমে আসে। এরপর যন্ত্রপাতিতে ঠাসা ছাদ হাতড়ে একটি ‘স্কেল’ বের করে আনেন কর্মকর্তারা। সোনার বারগুলো স্কচটেপে পেঁচিয়ে লম্বা স্কেলের আকার দিয়ে একটি পাইপের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলছেন, উড়োজাহাজের কারিগরি বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ছাড়া কেউ এভাবে স্বর্ণ লুকিয়ে রাখতে পারে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের মুখপাত্র তাহেরা খন্দকার বলেন, “স্বর্ণ উদ্ধারের প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত হয়। সেখানে আমাদের লোকজন কেউ জড়িত থাকলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যদি ধরা পড়ে।
“আর কাস্টমস এগুলো উদ্ধারের পর থানায় মামলা করে। সেই মামলারও তদন্ত চলে। আমাদের একটা ডিপার্টমেন্ট এগুলো ডিল করে।”
উড়োজাহাজের বিভিন্ন অংশ খুলে এভাবে সোনার বার রাখলে ঝুঁকি তৈরি হয় কি না- জানতে চাইলে বিমানের একজন জ্যেষ্ঠ পাইলট বলেন, “একটা উড়োজাহাজে কতশত ধরনের ‘ওয়্যারিংস’ থাকে, সেটা জেনে বা না জেনেই তারা বিভিন্ন জায়গা খুলে স্বর্ণ রাখছে তারা। এটা ডেফিনিটলি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।
“বিদেশ থেকে তারা এটা কীভাবে ঢোকাচ্ছে, দেশ থেকেই বা কী করে বাইরে বের করে নিয়ে যাচ্ছে… এই বিষয়গুলো বন্ধ করার মতো সিকিউরিটিটা আমরা এতো বছরেও ‘এনশিওর’ করতে পারছি না।”
প্রথম কবে বিমানের উড়োজাহাজ থেকে স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় তার সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ জানা গেল না কারও কাছে। তবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্সে সোনার সবচেয়ে বড় চালানগুলো জব্দ হয় ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। ওইসব ঘটনায় মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি।
বিমানে সবচেয়ে বড় সোনার চালান উদ্ধার হয় ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই। একটি এয়ারবাস-৩১০ মডেলের উড়োজাহাজের কার্গো হোল থেকে ১২৪ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়।
উড়োজাহাজের মালামাল রাখার কার্গো হোলের ঠিক ওপরে একটি টয়লেটের কমোডের পেছনের অংশ আলগা করে সেখান দিয়ে বারগুলো ফেলা হয়।
ওই ঘটনায় মামলার দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৭ সালে ১৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ১৮ আসামির ১০ জনই বিমানের কর্মী।
২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ থেকে ১০৫ কেজি ওজনের ৯০৪টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। উড়োজাহাজটির সাতটি টয়লেটের ঢাকনার স্ক্রু খুলে বারগুলো রাখা হয়েছিল। ১২৪ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার মামলার আসামি বিমানকর্মীদের মধ্যে কয়েকজন এই মামলারও আসামি।