বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনে প্রাচীন সমৃদ্ধির নিদর্শন


মাহমুদ নেওয়াজ জয় | Published: October 15, 2022 16:51:38 | Updated: October 15, 2022 20:57:10


ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মিলেছে প্রাচীন বাইজানটাইন সভ্যতার নিদর্শন, ছবি: আরব নিউজ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার এক শরণার্থী শিবির। সেখানে কাজ করেন কৃষক সালমান আল-নাবাহিন। এখন থেকে মাস ছয়েক আগের কথা। তার জলপাই বাগানে কাজ করতে গিয়ে মাটি খুঁড়ে খুঁজে পান একটি রেলিক৷ তারপর ছেলেসহ আরো তিনমাস ধরে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। 

এরপর তারা পান মোজাইকের তৈরি সুবিশাল এক মেঝে। এখানে প্রোথিত বিভিন্ন পশু ও পাখির ১৭ টি ইথনোগ্রাফি। এখনো খুব স্পষ্টই বোঝা যায় সবগুলো। রংয়েও আছে তেমনই ঔজ্জ্বল্য।  

তারপর জানা গেলো সাধারণ কোনো চিত্র নয় এগুলো। নয় খুব একটা নতুন। বরং এগুলোর বয়স দেড় হাজার বছরের কাছাকাছি। সেই পঞ্চম থেকে সপ্তম শতাব্দীর বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের অংশ এসব মোজাইক নকশা। যা হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপ্ত হয়ে রয়ে গিয়েছিলো গাজার কেন্দ্রীয় অংশে। 

জেরুজালেমে অবস্থিত ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক শিক্ষাকেন্দ্রের প্রত্নতত্ত্ববিদ রেনে এলটার মুগ্ধ হয়েছেন এই কাজগুলো দেখে। তার মতে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর  মোজাইকের মেঝে গাজায় উদ্ধার হওয়া এই মোজাইক মেঝেই। জ্যামিতির জটিল সব কলাকৌশল কিংবা নকশা উপস্থাপনের মান- সবমিলিয়েই এটি সেরা। 

তবে এখনো গবেষণার মাধ্যমে এর বয়স নির্ণয় করা হয়নি। এলটারের ধারণায় এর বয়স চোদ্দশ থেকে ষোলশ বছর হতে পারে। অর্থাৎ, পঞ্চম থেকে সপ্তম শতাব্দীর ভেতরে কোনো এক সময়ে এটি নির্মিত হয়েছিলো। 

তবে কী উদ্দেশ্যে এই নকশাগুলো করা হয়েছিলো তাও পরিষ্কার নয়। এলটার মনে করেন, নকশাগুলো কখনকার তা জানতে হলে ঠিকঠাকভাবে খনন ও পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এটি অতীতে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিলো তাও পরিষ্কার হয়নি। এটি কি ধর্মীয় কোনো শিক্ষাকেন্দ্র বা বিহার ছিলো, নাকি অন্য কোনো ধরণের প্রতিষ্ঠান- তার উত্তরও এখনো অজানা। 

তবে এলটার নিজেও নিদর্শনটি সশরীরে দেখতে পারেননি। গবেষণা সঙ্গীদের তোলা ছবি ও করা ভিডিওগুলো দেখেছেন। 

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে গাজায় বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের সময়ের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উদ্ধার হয়েছে। নকশার যে বিবর্তন সেখানে দৃশ্যমান, সে হিসেবে এটিই তুলনামূলক আধুনিক। 

এ বছরের জানুয়ারিতে পঞ্চম শতাব্দীর এক চার্চের অবশেষ পাওয়া গিয়েছিলো জাবালিয়ায়। তিন বছরব্যাপী চলা এক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির ফলে গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে এর সন্ধান মেলে। 

এই গাজা উপত্যকা ইসরায়েল ও মিশরের মাঝে থাকা উপকূলীয় এক বন্ধনী। প্রাচীনকালে মিশর ও লেভ্যান্টদের ভেতর বাণিজ্যের জন্য তুমুল ব্যবহৃত হতো এটি। এই উপকূলীয় উপত্যকাটি জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন সময় ও সভ্যতার সেসব অবশিষ্ট চিহ্ন। সেই ব্রোঞ্জ যুগ থেকে শুরু করে অটোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত সবই আছে এর ভেতর।  

২০০৭ সাল থেকে অবশ্য ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রেখেছে গাজা উপত্যকা। যার ফলে সমৃদ্ধ অতীতের সেই জনপদের অন্তত অর্ধেক মানুষ (প্রায় দশ লক্ষ লোক) আজ না খেয়ে থাকেন। ৪৫ শতাংশ ভুগছেন বেকারত্বের পীড়নে। অথচ তাদের একসময় ছিলো এমন অসাধারণ স্থাপত্য, যা সমৃদ্ধ জনপদের চিহ্ন। আজ যা শুধুই স্মৃতি।

মাহমুদ নেওয়াজ জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। 

mahmudnewaz939@gmail.com 

Share if you like