ঢাকার নয়া পল্টন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষের পর দলটির কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভেতরে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ন কমিশনার (ট্রাফিক- দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপি অফিসের ভেতরে বেশ কিছু বোমা, ককটেল পেয়েছি আমরা, অভিযান চলছে। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।”
এদিকে সংঘর্ষের সময় টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচতে বিএনপি অফিসে আশ্রয় নেওয়া কয়েকশ নেতাকর্মীকে সেখান থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য বিএনপি আমানউল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ দলটির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাও আছেন তাদের মধ্যে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপির কয়েকজন নেতা আমাদের হেফাজতে আছেন। ওই কার্যালয়ে আমাদের অভিযান চলছে।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে নয়া পল্টনে ছুটে এলেও তাকে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
সন্ধ্যার দিকেও মির্জা ফখরুলকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে বসে থাকতে দেখা যায়। এসয় তার আশপাশে কিছু নেতাকর্মী এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ ছিল।
সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দশটি প্রিজন ভ্যানে কর কয়েকশ মানুষকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় নয়া পল্টন থেকে। ভ্যানগুলো থেকে নেতাকর্মীরা অনেকে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কেউ আবার হাত নাড়ছিলেন।
কয়েকজন আবার পুলিশকে অনুরোধ করছিলেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য। নিজেদের পথচারী, চাকরিজীবী, দোকান কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিলেন তারা।
সংঘর্ষ ও অভিযানের কারণে ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কে বিকাল ৩টা থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত যান চলাচল শুরু হয়নি বলে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়।
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে বিএনপিকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।
বিকালে তারা যখন বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন, তারই এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
পুলিশ ধাওয়া দিলে বিএনপি কর্মীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ তখন রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোয়াট সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে।
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে নয়া পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তদের মধ্যে আকবর নামে ৩০ বছর বয়সী একজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নিহত ওই যুবকের শরীরে ‘ছররা গুলির চিহ্ন’ রয়েছে। আহত আরও অন্তত তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আটক হওয়ার আগে সংঘর্ষ চলার সময় রিজভী টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেতাকর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে পার্টি অফিসে এসেছিলেন। তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। টিয়ার গ্যাসে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক কর্মীকে আহত অবস্থায় আটক করে নিয়ে গেছে।”
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, “১০ তারিখে বিএনপির সমাবেশের স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি কিন্তু আজ নয়াপল্টন পার্টি অফিসের সামনে উভয় পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বারবার অনুরোধ করার পরও রাস্তা ছেড়ে দেয়নি। পরে তাদেরকে উঠাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এভাবেই সংঘর্ষের ঘটনা। পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।”
পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপি অফিস ঘিরে ফেলে ভেতরে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই সময় যারা ভেতরে ছিলেন, কাউকে আর বের হতে দেওয়া হয়নি। মির্জা ফখরুল গেইটে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
এর মধ্যে বিকাল ৫টার দিকে বিজয় নগরের সড়কে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। পানির ট্যাংকের আশপাশের গলি থেকে বিএনপি কর্মীরা বেরিয়ে এসে পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পলিশ সদস্যরা এ সময় রাবার বুলেট এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। তখন ওই এলাকার যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ফকিরাপুল মোড় থেকে বিএনপি কার্যালয় পর্যন্ত সড়কে আওয়ামী লীগের অর্ধশত নেতাকর্মীকে লাঠি নিয়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ শ্লোগান দিয়ে বারবার চক্কর দিতে দেখা যায়।