Loading...

বান্ধবীর সামনে ‘হিরো হতে’ শিক্ষককে পেটান জিতু

| Updated: July 01, 2022 12:28:59


বান্ধবীর সামনে ‘হিরো হতে’ শিক্ষককে পেটান জিতু

স্কুল ক্যাম্পাসে বান্ধবীকে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে ‘নিষেধ করেছিলেন’ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার; সেই ক্ষোভে আর ‘নায়ক হওয়ার চেষ্টায়’ স্কুলছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু তাকে স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটান বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

গত ২৫ জুন দুপুরে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ওই ঘটনার পরদিন মারা যান শিক্ষক উৎপল। এরপর বুধবার জিতুকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তিনি বলেন, “জিতু বান্ধবীর সামনে হিরোইজম দেখাতে সেদিন পরিকল্পনা করেই শিক্ষক উৎপলের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ব্যবহৃত স্টাম্পটি সে ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকেই নিয়ে এসেছিল।”

উৎপলের মৃত্যুর পর তার ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। সেই মামলাতেই জিতুকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “জিতুর বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খলতার অভিযোগ রয়েছে। ইভটিজিং, স্কুলের ভেতরে ধূমপান, স্কুল কম্পাউন্ডে বেপরোয়া বাইক চালানোর মতো অনেক অভিযোগ রয়েছে।

“স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের এই ছেলে ‘জিতু দাদা’ নামে একটি কিশোর গ্যাং তৈরি করেছিল। বিভিন্ন সময় মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঘুরত, মানুষকে হেনস্থা করত। তার বিরুদ্ধে বিচার দেওয়া হলে আরও ভয়-ভীতি দেখাত, মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন করত।”

আল মঈন বলেন, জিতুর এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেছে। স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে উৎপল কুমার সরকার চেষ্টা করেছেন জিতুকে ‘কাউন্সেলিং’ করতে, এ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখতে।

“কিছুদিন আগে জিতু কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে ঘুরছিল। উৎপল শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে জিতু ও ওই ছাত্রীকে বোঝান।

“জিতু স্কুল প্রাঙ্গণে ধূমপান করত, তাকে চুল কাটার জন্য বলা হত, বেপরোয়া মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ করা হত। এসব নিয়ে জিতুকে অনেকবার বলেছেন উৎপল। এসব নিয়েও ক্ষোভ ছিল জিতুর। আর সর্বশেষ ওই ছাত্রীর ঘটনা যুক্ত হয়।”

এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “সেই ছাত্রীর সামনে হিরোইজম দেখানোর জন্য শিক্ষককে স্টাম্প নিয়ে আঘাত করে জিতু। এজন্য ২৫ জুন পরিকল্পনা করে বাসা থেকে স্টাম্প নিয়ে স্কুলে যায়। উৎপলকে আঘাত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকে।

“উৎপল সেসময় মাঠে ক্রিকেট খেলা পরিচালনা করছিলেন। মাঠের এক কোণে তাকে একা পেয়ে পেছন থেকে আঘাত করে। এরপর আরও কয়েকটি এলোপাতাড়ি আঘাত করে জিতু স্কুল ছেড়ে এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। যখন সন্ধ্যায় জানাজানি হয়, শিক্ষক উৎপলের অবস্থা গুরুতর, তখন জিতু মানিকগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যায়।”

র‌্যাব জানায়, মানিকগঞ্জ থেকে যখন জিতু বুঝতে পারেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে অনুসরণ করছে, তখন পাবনায় এক পরিচিত ব্যক্তির বাসায় চলে যান তিনি। মঙ্গলবার ভোরে আরিচা হয়ে তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় দনুয়া গ্রামে তার এক বন্ধুর বাড়িতে যান। পরে সেই বাড়ি থেকে র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব- ১ এর যৌথ দল তাকে গ্রেপ্তার করে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জিতুর পরিবার ‘মোটামুটি’ অবস্থাপন্ন। ওই স্কুলের মালিকপক্ষ সবাই বিভিন্নভাবে জিতুর আত্মীয়। তাদের নিজেদের মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল রয়েছে। এলাকায় তাদের প্রভাব রয়েছে।

“এভাবে সে তার বন্ধু-বান্ধবসহ একটি গ্রুপ মেইনটেইন করত। এসব কারণে বিভিন্ন সময় তার শিক্ষাজীবনে ব্যাঘাত ঘটেছে। এলাকায় যেহেতু কিছুটা আধিপত্য ছিল, এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সে পার পেয়ে গেছে,” বলেন আল মঈন।

শিক্ষক উৎপলকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারে জিতুর বয়স ১৬ থাকায় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীদের অপরাধের বিচার হয় কিশোর আইনে।

সেই সুবিধা পাইয়ে দিতে জিতুর বয়স কম দেখানো হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন স্থানীয়রা। তবে তার বয়স ১৯ বলে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

মঈন বলেন, “জিতুকে গ্রেপ্তারের পর তার কলেজ থেকে জুনিয়র দাখিল পরীক্ষার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হয়। সেখানে তার জন্ম তারিখ রয়েছে ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি।

“সে অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে লেখা ১৬ বছর।”

খুনের ওই মামলায় জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে বুধবার ভোরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে পাঁচদিনের হেফাজতে নেওয়া হয়।

এ মামলায় বাবা কেন গ্রেপ্তার- এমন প্রশ্নে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “মামলার বিজ্ঞ আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) তদন্তের স্বার্থে মনে করেছেন, তার বাবার রিমান্ড প্রয়োজন, এজন্য তারা রিমান্ড চেয়েছেন।”

তবে জিতুকে পালাতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “জিতু এক কাপড়েই পালিয়ে যায়। এভাবেই সে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছিল। সে যে পালিয়ে ছিল, একদমই ট্রেসলেস।

“তার সঙ্গে কেউ ছিল না। এ কারণে তাকে ধরতে একটু দেরি হয়েছে। কেউ তাকে পালাতে সহায়তা করেছে এমন তথ্য পায়নি র‌্যাব।”

Share if you like

Filter By Topic