ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: December 14, 2022 13:12:34


ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

স্বাধীনতার উষালগ্নে জাতির সূর্যসন্তানদের হারানোর বিষাদময় দিনটি স্মরণ করছে বাংলাদেশ।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জাতির হাজারো মেধাবী সন্তানকে।

বুধবার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়; বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে সেখানে কুশল বিনিময় করেন সরকারপ্রধান।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ এলাকা। জাতীয় পাতাকা আর শ্রদ্ধার ফুল হাতে নানা বয়সের হাজারো মানুষ জড়ো হন শহীদ বেদীতে।

ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীও সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।

সকাল ৭টার দিকে গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা প্রথমে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। পরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১, রক্তধারা ৭১ সহ বিভিন্ন সংগঠন একে একে শহীদ বেদীতে ফুল দেয়।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে। 

এ স্মৃতিসৌধের খালি জায়গাগুলো সাজানো হয়েছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি দিয়ে। একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন (বিচ্ছু জালাল) সকাল থেকেই মাইকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

তিনি বর্ণনা করেন কীভাবে এই দিনটিতে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। স্মৃতিসৌধে পতাকা অর্ধনমিত না থাকায় এক পর্যায়ে এই মুক্তিযোদ্ধা নিজ হাতে তা অর্ধনমিত করে দেন।

অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে ওঠে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায়।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়; তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।

শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

সেই অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েছে বাংলাদেশ। কলঙ্ক মোচনের পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ এখন গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরও দাবিদার।

বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে শুক্রবার বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠানের। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি।

Share if you like