এক মাস হয়ে গেলেও ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের ‘রহস্য’ উন্মোচিত না হওয়ায় হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
দ্রুত তদন্তের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে তারা বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেছেন। সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা সন্তান হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের প্রায় এক মাস অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়নি এবং হত্যাকারীরা চিহ্নিত হয়নি।
“আমরা প্রথম থেকেই দ্রুত তদন্তের জন্য দাবি করে আসছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ ফারদিনের মরদেহপ্রাপ্তির ২৯তম দিনেও আমরা জানি না- কী কারণে আমাদের বন্ধু ফারদিনকে হত্যা করা হল। এমতাবস্থায় তদন্তের এই দীর্ঘসূত্রতা দেখে আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা অনেক আশাহত।”
এদিকে তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ এবং ছায়াতদন্তকারী সংস্থা র্যাবের পরস্পরবিরোধী তথ্যের কারও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
“আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা ফারদিন নূর পরশের খুনিদের শনাক্ত করে দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য পুনরায় জোর দাবি জানাচ্ছি,” বলা হয় লিখিত বিবৃতিতে।
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন। পরে ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই সময় ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকরা। তবে তার মোবাইল, মানিব্যাগ ও ঘড়ি সব তার সঙ্গেই পাওয়া গিয়েছিল।
ফারদিনের বাবার করা মামলায় তার বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় রামপুরা থানা পুলিশ। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাতে সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে চনপাড়ায় মাদক বিক্রেতাদের পিটুনিতে ফারদিন মারা গেছে।
তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, চনপাড়াতেই ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে কি না, তা তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব ডিবির উপর হলেও র্যাবও এর ছায়া তদন্ত করছে।
মানববন্ধনে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা বলেন, “এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। এখনও পর্যন্ত তদন্তকারী সংস্থাগুলো কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেনি, এটা অত্যন্ত হতাশার। আরেকটি বিষয়, তার নামে যে বিভ্রান্তমূলক তথ্য ছড়িয়েছে, এটা তাদের জন্য কষ্টকর।
“আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হোক এবং শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
এ সময় তদন্ত দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছেন নূরউদ্দিন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাশে দাঁড়ালেও বুয়েট প্রশাসনের নীরবতায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ফারদিনের বাবা বলেন, “এটা একটা দুঃখজনক ব্যাপার, সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী ও বন্ধুকে হারিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বুয়েট প্রশাসন বা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহমর্মিতা দেখা যায়নি।
“তদন্তের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা এবং সেখানে তাগিদ দেওয়ায় বিষয়ে তাদের দায়িত্ব ছিল। ফারদিন আমার সন্তান, বুয়েটও তো তার অভিভাবক ছিল। এ ক্ষত্রে তারা পদক্ষেপ নিলে দ্রুত অগ্রগতি হবে বলে আামি মনে করি।”