ফরিদপুরের হাসপাতাল: তেল নেই, তাই চলে না অ্যাম্বুলেন্স


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: December 16, 2022 11:42:39


ফরিদপুরের হাসপাতাল: তেল নেই, তাই চলে না অ্যাম্বুলেন্স

‘তেল বরাদ্দ না থাকায়’ ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের দুইটি অ্যাম্বুলেন্স দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের সেবাপ্রার্থীদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকায়। à¦–বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তেল বরাদ্দ না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে।

১৯১৭ সালে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলী মুজিব সড়কের পাশে স্থাপিত হয় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১২৫।

শহরের রোগীরা প্রথম অবস্থায় শহরের মধ্যে অবস্থিত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও রোগীরা আগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। এখানে যেসব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব তাদের এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়; পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত জটিল রোগীদের পাঠানো হয় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা বিমান দত্ত বলেন, তিনি তার অসুস্থ শ্বশুরকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানে তার অবস্থার অবনতি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

তার অভিযোগ, জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নিতে চাইলে তাকে জানানো হয় তেল সংকটের কারণে হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরে তাকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়।

মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, “আমাদের এলাকার এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। সুস্থ হওয়ার পর তাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। বাধ্য হয়ে দুই হাজার টাকা খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে নিতে হচ্ছে। অথচ সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ৭শ থেকে ৮শ টাকার বেশি লাগত না।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণের পশ্চিম পাশে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের কাছে চারটি গাড়ি রাখার গ্যারেজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গ্যারেজে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দুটি কলাপসিবল গেট টেনে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে।

অ্যাম্বুলেন্স দুটির চালক মোতাহার হোসেন (৫১) ও ইমরান হোসেন (৪২) অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় তাদের হাসপাতালে কোনো কাজ নেই। তবে তারা প্রতিদিনই হাজিরা দেন হাসপাতালে।

শহরের গোয়ালচামট এলাকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান বলেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সময়মত রোগীকে হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাইরের অ্যাম্বুলেন্স পেতে যেমন সময় লাগে তেমনি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকার সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। তারা আদায় করেছে দ্বিগুণ ভাড়া।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার গণেশ কুমার আগারওয়ালা বলেন, তেল বরাদ্দ না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে পেট্রল পাম্প থেকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল নেওয়া হতো, সেই পেট্রল পাম্পে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। ফলে গত ১ নভেম্বর থেকে রোগীদের সেবায় তারা অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারছেন না।

দেড় মাস ধরে এই সেবা বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, “তেল কম বরাদ্দ পাওয়ায় আমাদের অ্যাম্বুলেন্সের সেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তেল বাবদ আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। অথচ বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭২ হাজার টাকা। বরাদ্দের টাকা বাড়বে ভেবে আমরা নির্ধারিত পেট্রল পাম্পে বুঝিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার তেল বাকিতে ব্যবহার করেছি। কিন্তু এখনও বরাদ্দ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রাখতে হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, এ সংকট সমাধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (অর্থ) দুই দফা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একবারসহ মোট তিনবার লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।

“কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর পাইনি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে।”

Share if you like