সংসদের সব আসন ছাড়ার পর বিএনপি সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত মুখ হিরো আলমকে বগুড়ায় উপ নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “ফখরুল সাহেব বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায়রে মায়া! হিরো আলমের জন্য এত দরদ উঠলো ফখরুলের, ফখরুল ভেবেছিল হিরো আলম জিতে যাবে! হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“তারা তো নির্বাচন চায় নাই। হিরো আলমকে বিএনপি দাঁড় করিয়েছে। সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্নভঙ্গ।”
শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের ফলে শূন্য ছয়টি আসনে বুধবার উপ নির্বাচনে ভোট হয়। এতে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী হন সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত মুখ হিরো আলম, যার আসল নাম আশরাফুল আলম।
এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে হাড্ডাহাডি লড়াই করতে সক্ষম হন তিনি; মাত্র ৮৩৪ ভোটে সরকার সমর্থক প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে হেরে যান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “ফখরুল সাহেব, পাকিস্তান আমল তো ভালো, এখন পাকিস্তানের কী অবস্থা? বাংলাদেশের ছয় মাস আমদানি করার রিজার্ভ আছে। পাকিস্তানের তিন সপ্তাহেরও রিজার্ভ নেই। তিন সপ্তাহে আমদানি করতে পারে, সেই টাকা তাদের রিজার্ভে নাই।”
“আজকে ক্ষুধায় সমস্ত পাকিস্তান কাঁপছে, সেই পাকিস্তান আপনার ভালো লাগে। বাংলাদেশ- বাংলাদেশ থাকবে, এই বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু আপনারা যদি ক্ষমতায় যান, বাংলাদেশ আজকের পাকিস্তান হবে। ফখরুল সাহেব পেয়ারের পাকিস্তান বাংলাদেশকে বানাবে- আমরা সেটা হতে দেব না।"
এদিনের সমাবেশেও মঞ্চে নেতাদের ওঠা নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গত ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঞ্চ ভেঙ্গে পড়েছিল। ওই ঘটনায় আহত হয়ে পাঁচবার ড্রেসিং করতে হয়েছে বলে সমাবেশে জানান তিনি।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এত সুন্দর পরিবেশ, হাজার হাজার শিক্ষার্থী। মঞ্চে এত ভিড়, ধারণ করতে পারেনি। আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেন। আমার পাঁচ-পাঁচবার ড্রেসিং করতে হয়েছে। আমি তো সেটা বলিনি। এসব নিয়েই আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে আমি যাচ্ছি। প্রতিদিন পার্টি অফিসে আসি। দল করলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে।
"পেছনে এত লোক কেন দাঁড়িয়েছেন? আমাদের এত নেতার দরকার নেই। সরে যান। ছাত্র নেতারা এত বড় নেতা হয়ে গেছেন? তারা মঞ্চে কেন? এটা আওয়ামী লীগের মিটিং। আমি যখন ছাত্রলীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের মঞ্চ হত বায়তুল মোকাররমের সামনে; আমি সভাপতি একদিনও মঞ্চে উঠতে পারিনি, বক্তৃতা তো দূরের কথা। আর এখন আমার ছাত্র ভাইদের জ্বালায় মঞ্চ ভেঙে পড়ে। সব প্রাক্তন নেতা! ওয়ার্ড শাখার কোনো সময় সেক্রেটারি ছিল, তিনিও এখন প্রাক্তন ছাত্রনেতা। সব মঞ্চে উঠছে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, "দলের মধ্যে থেকে, সরকারের মধ্যে থেকে, দলের পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, মাস্তানি, জমি দখল- এসব যারা করবে, মাদক ব্যবসা যারা করবে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সঙ্গে আছে তাদের আওয়ামী লীগ করার সুযোগ নেই।"
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দ্রুত কমিটি করার নির্দেশও দেন তিনি।
কমিটিতে ভালো লোক আনার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “ত্যাগী লোকদের দিয়ে কমিটি করুন। বসন্তের কোকিল খারাপ সময়ে থাকবে না। বসন্তের কোকিল বসন্তে আসে, মৌসুমে আসে; মৌসুম চলে গেলে আবার চলে যায়। এসব কথা এখন বলা বেশি প্রয়োজন।”
সমাবেশের শুরুতে তিনি সবাই কেমন আছেন জানতে চেয়ে বলেন, “জানি একটু ভালো নেই। আমরা পরিস্থিতিকে অস্বীকার করছি না। শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করছেন- যাতে করে আপনাদের দুঃসময় কেটে যায়। শেখ হাসিনা রাত জেগে মানুষের কথা ভাবেন।
“পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশের ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার মত এত ভালো মানুষ, এত সৎ মানুষ- আরেকজন আমরা দেখি নাই। নিজের চিন্তা নেই, সংসারের চিন্তা নেই, ছেলে মেয়েদের চিন্তা নেই। ছেলেমেয়েদের জন্য নেই হাওয়া ভবন।”
বিএনপির উঁচু গলা নিচু হয়ে গেছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, “কী খেলব তাদের সঙ্গে? বিএনপিকে বলি- ঢাল নাই, তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারের সঙ্গে খেলতে চাই না। সেই রকম পার্টি দরকার, প্রতিপক্ষ দরকার। আন্দোলনের খেলাইতো পরাজিত হয়ে গেছেন, আর পারবেন না। আন্দোলনের বেলা চলে গেল। আর বাকি আছে নির্বাচন।
“আসেন নির্বাচনে মোকাবিলা হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত, আপনারাও প্রস্তুত হোন। খালি মাঠে আমরা গোল দিতে চায় না, দুর্বল প্রতিপক্ষ চায় না। আসেন আপনারা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ চায়, নির্বাচন ফেয়ার হবে।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বক্তব্য রাখেন।
শান্তি সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ।