Loading...
The Financial Express

প্রবাসে এনআইডি সেবা কতদূর

| Updated: December 06, 2022 14:31:56


প্রবাসে এনআইডি সেবা কতদূর

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক কাজ শুরুর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কাউকে এনআইডি দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।

কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় দেশ থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটার নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার পর তাদের স্থানীয় ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে।

কিন্তু ভোটার নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইসির এনআইডি উইংয়ের প্রতিনিধি দল সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যেতে না পারায় আটকে আছে প্রবাসীদের এনআইডি সেবা কার্যক্রম।

দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা পেরিয়ে কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৯ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এরপর মহামারীতে সেই উদ্যোগ থমকে যায়।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আবার সেই কাজে গতি আনার উদ্যোগ নিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রবাসীরা দেশে এলে তাদের দ্রুত ভোটার করার পাশাপাশি দুর্ভোগ লাঘবের পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বৈঠক করা হবে।

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, “বিভিন্ন সংস্থা কীভাবে প্রবাসীদের জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট সেবার কাজটি করছে, আমরা এখন সে অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে চিঠি দিয়েছি। ফি ও লোকবল নির্ধারণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন লাগে। এসব বিষয় সমাধান করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদক্ষেপ নেব।”

কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক সংকটের কথা বিবেচনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দূতাবাসে ইসির লোক পাঠিয়ে নিবন্ধনের কাজটি করার বিরোধিতা করেছে।

বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে মিশন আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে আবেদনগুলো ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে যাচাই-বাছাই এবং পাসপোর্ট প্রিন্টের জন্য পাঠিয়ে থাকে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট প্রিন্ট করার পর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সেগুলো বিতরণ করার জন্য ডাকযোগে মিশনগুলোতে পাঠায়।

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করলে তা টেকসই, বাস্তবসম্মত, সাশ্রয়ী ও অধিক প্রবাসীবান্ধব হবে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছু লোক দূতাবাসে নিয়ে কাজটা করতে চাই। আপাতত দেশে ফিরলে প্রবাসীদের দ্রুত এনআইডি সেবা দিচ্ছি আমাদের প্রবাসী ডেস্কের সহায়তায়। দেশে আমরা যথেষ্ট করছি। চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রবাসেও যাতে সেবা দেওয়া যায়।

“একটু সময় নিচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছি, চিঠি দিচ্ছি। সব কিছু ঠিক করে কমিশনে উপস্থাপন করব। ইসির অনুমোদন পেলেই অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব। তাদের লোকজনকে পাঠাতে বলব।”

সংসদীয় কমিটির সুপারিশ

প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি দেওয়ার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে।

কমিটির কার্যপত্রে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, ইউএই ও কুয়ালালামপুরে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের সিদ্ধান্তটি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর সুপারিশ করা হয় সভায়।

বৈঠকে জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিদেশি মিশনগুলোর মধ্যে নিবিড় আলোচনা ও সমন্বয় চলমান। মিশনগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, তাদের এ ব্যাপারে পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ও প্রস্তুত। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রস্তাব করেছিল, তাদের একটি প্রতিনিধিদল মিশনে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বায়োমেট্রিক তথ্য নিয়ে তা দেশে এসে প্রক্রিয়াকরণ ও প্রিন্ট করে বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মিশনে পাঠাবে।

কিন্তু সরকারের বর্তমান কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মত দেয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের প্রতিনিধিদল মিশনে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়ার পরিবর্তে মিশনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া ‘অধিকতর সমীচীন’ হবে।

সেজন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোতে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে পারে বলে সুপারিশ করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি বর্তমানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বিবেচনাধীন। তাদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়া গেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং মিশনগুলো পরবর্তী কাজ এগিয়ে নেবে বলে কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

ছয় দেশের আবেদন ৩৭৬২টি, এনআইডি উইংও প্রস্তুত

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) নিবন্ধন ও প্রবাসী শাখার পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকার জানান, এ পর্যন্ত ছয়টি দেশ থেকে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধনের ৩৭৬২টি আবেদন পাওয়া গেছে।

তার মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৩৮০ জন, সৌদি আরবের ১২৭৬ জন, সিঙ্গাপুরের ২৬৬ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০৩০ জন, যুক্তরাজ্যের ৭৭৪ জন ও মালদ্বীপের ৩৬ জনের আবেদন রয়েছে।

তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যে এনআইডি দেওয়ার কাজটি আর এগোয়নি। যেসব আবেদন পাওয়া গেছে, দেশে স্থানীয়ভাবে সরেজমিন তদন্ত করে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে এখনও কোনো দেশেই এনআইডি দেওয়া যায়নি।

ইসির দিক থেকে বিদেশি মিশনে গিয়ে কাজ শুরুর জন্য ‘ডিও লেটার’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাতে সায় মেলেনি।

আব্দুল মমিন বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ছাড়া কাজ এগোবে না। সব ধরনের বিষয় পর্যালোচনা করে শিগগির ইসি সচিবালয় থেকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। কোনো দেশেই কার্ড ডিস্টিবিউশন স্টার্ট হয়নি। এখন আশা করা যায়, কাজটি নতুন উদ্যম পাবে। ধারাবাহিকভাবে কাজ চলছে। আমরাও প্রস্তুত।”

নতুন কমিশন আসার পর গত জুনে বিশেষ টিম পাঠিয়ে জরুরিভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। এ পরিস্থিতিতে দূতাবাসে স্পট রেজিস্ট্রেশন করে কাজ করার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনাও দিয়েছে ইসি সচিবালয়।

নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান জানান, প্রবাসীরা দেশে এলে যাতে কোনো ধরনের বিড়ম্বনার মধ্যে না পড়েন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা রয়েছে ইসির।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে পাসপোর্ট সংক্রান্ত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে সনদ সংক্রান্ত, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করে একটি সুপারিশ কমিশনে উপস্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনআইডি উইংকে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি সেবার হালনাগাদ তথ্য কমিশনে উপস্থাপন হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া হবে জানান তিনি।

Share if you like

Filter By Topic