নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় রাখতে চেষ্টা চালানোর কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে ‘প্রতিনিয়ত আলোচনা করার’ প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।
মঙ্গলবার সকালে একনেক বৈঠকে তিনি বলেন, “এখন আমি একটা অনুরোধ করব, সেটা হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের মূল্যস্ফীতি কত, এটা নিয়ে আলোচনা করার খুব একটা প্রয়োজন নাই। কারণ অনেক দেশ এটা নিয়ে আলোচনা করে না।“ খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“আমি যত আন্তর্জাতিক মিডিয়া দেখি, বিশেষ করে আমেরিকা বা ইউরোপ বা এসব দেশ, যারা সব সময় এসব নিয়ে বেশি চর্চা করে, তারা কিন্তু এইগুলো নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করে না বা এটার প্রভাব কী হয়েছে সেটা নিয়েও কথা বলে না। আমাদেরও বোধ হয় এটা নিয়ে খুব বেশি আলোচনার প্রয়োজন নাই।”
ইউক্রেইন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে সবধরনের পণ্য ও সেবার দাম গত কয়েক মাস ধরেই বাড়তি। সর্বশেষ অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর- দুই মাসেই মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের উপরে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একনেক সভায় যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতার মধ্যে যাতে থাকে, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তার জন্য যা যা করণীয় সেটা আমরা করব।”
সরকারপ্রধান বলেন, “বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের শাসন ব্যবস্থা এমন যে, তারা জনগণ কী পেল বা না পেল কিংবা কী খেল বা না খেল, সেটা নিয়ে অনেক সময় চিন্তা করে না। আমাদের কিন্তু তা না। আমাদের সব সময় জনগণের প্রতি একটি দায়িত্ববোধ আমাদের আছে। আমরা সেটা অনুভব করি। আর সেভাবেই কাজ করতে চাই দেশের। সেটা আমরা করি।”
করোনা ভাইরাস মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় উন্নত দেশগুলোও যে হিমশিম খাচ্ছে, সে কথা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।
২০২৩ সাল বিশ্বের জন্য ‘সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ একটা বছর; হতে পারে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই সময়ে দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। সেই কথাটা মাথায় রেখে আমাদেরকে এখন থেকেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং খাদ্য সংরক্ষণের কী ব্যবস্থা করা যেতে পারে বা প্রক্রিয়াজাত করা যেতে পারে সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”
সেজন্য খরচে লাগাম দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অহেতুক আমরা কোনো ব্যয় বৃদ্ধি করব না। সেখানে আমাদের যেমন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি, গ্যাস এগুলো সবকিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলকে খুব সচেতন হতে হবে, সতর্ক হতে হবে।
“আর প্রত্যেকটা পরিবারকেই আমি অনুরোধ করব সবাইকে সঞ্চয়ী হতে হবে। যে যেটুকু পারবে সঞ্চয় করে রাখতে হবে। এটা সরকারের জন্যও প্রযোজ্য। আমাদের সঞ্চয়টাও বাড়িয়ে রাখতে হবে। অহেতুক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। যেটুকু প্রয়োজন, আমরা সেটুকু করব। কিন্তু তার বেশি না। সেই সুযোগটা নেই।”
দেশের উন্নয়নে ‘অহেতুক প্রকল্প’ না নেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “অহেতুক একটা প্রকল্প নিয়ে অনেকগুলো টাকা পেলাম দেখে সেখানে ঝাঁপ দেওয়ার দরকার নেই। প্রকল্প বাছাই সময় সবাই খুব সতর্কতার সাথে আমাদের প্রকল্প নিতে হবে।
“যে প্রকল্প থেকে কিছু রিটার্ন আসবে, কিছু আমরা আহরণ করতে পারব, দেশের উন্নয়নে লাগাতে পারব, উন্নয়নের কাজে লাগবে। সেই ধরনের প্রকল্পই আমরা গ্রহণ করব।”
“যে যত বড় টাকার অঙ্কের হিসাবই দিক না কেন, মোটা অঙ্কের টাকা পেলেই যে আমাদের সেটা নিতে হবে সেটা কিন্তু নেওয়া যাবে না। অন্তত আমি কিন্তু নেইনি এই পর্যন্ত। সেখানে আমরা সবসময় সতর্ক ছিলাম। আমাদের সেই সতর্ক থাকতে হবে।”
তবে কিছু প্রকল্প খুব দ্রুত ‘কিছু বেশি টাকা দিয়ে’ সম্পন্ন করে ফেলার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ প্রকল্পগুলো যত দ্রুত আমরা শেষ করতে পারব তত তার থেকে আমরা সুফলটা পাব। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে তার সুফলটা পাওয়া যাবে।
“যে প্রকল্পগুলো একটু বেশি টাকা দিয়ে হলেও দ্রুত শেষ করে সেটাকে কার্যকর করে দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা যায়, সেইগুলো আলাদা করে নিতে হবে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর যেগুলো হয়তো মাঝামাঝি ধরনের, ধীরে চললে কোনো অসুবিধা নেই বা কিছু প্রকল্প আছে হয়তো একটু ধীর গতিতে চলতে পারবে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাছার সময় এই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো বেছে নেবে এবং সেগুলো আমরা পাশ করবো এবং বাস্তবায়ন করে দেব।
“আবার অনেকগুলো হয়ত আমরা এখন অনুমোদন দিয়ে রাখছি, কিন্তু এটা নিয়ে তাড়া নেই। কাজেই সেগুলো একটু ধীরে চললে কোন ক্ষতি হবে না। সেগুলো আমাদের বেছে নিতে হবে সেভাবেই।”