নিবন্ধন চাওয়া নতুন দলগুলোর আবেদন যাচাই শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী, আবেদনে অন্তত ৯ ধরনের তথ্য পূরণ করতে হয় এবং সেই সঙ্গে ১০ ধরনের দলিলপত্রের সংযুক্তি দিতেই হবে।
বর্তমানে ইসির অধীনে ৩৯টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। এবার সব প্রক্রিয়া উৎরাতে পারলে যুক্ত হবে নতুন কোনো দল, যারা অংশ নিতে পারবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে।
নিবন্ধন পেতে আগ্রহী ৯৩টি আবেদনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোনো দল টিকবে কি না, জানা যাবে এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এ সংক্রান্ত ইসি সচিবালয়ের একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে উপস্থাপনের পর কমিশন দেখবে।
এর মধ্যে নিবন্ধন আবেদন করা কয়েকটি দল নিয়ে আপত্তি উঠেছে। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনো দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে কোনো কোনো দল জমা দেয়নি প্রয়োজনীয় চালানের টাকা, কোনোটির কেন্দ্রীয় কমিটির নাম-পদবী দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকায় সঙ্গতি নেই, কোনো দলের নেই গঠনতন্ত্র, কোনো দলের নিবন্ধনের ন্যূনতম শর্ত পূরণের দালিলিক প্রমাণ নেই কিংবা ঘাটতি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের।
আবার প্রাথমিকভাবে যেসব দলের তথ্য আবেদনে রয়েছে, তা সঠিক কিনা তা বাছাইয়ের কাজ চলছে।
জানতে চাইলে এই সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৯৩টি আবেদন পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ইসির বিবেচনার জন্যে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে। আমরা নির্ধারিত চেক লিস্টের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত-দলিলাদির বিষয় তুলে ধরব। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী পদক্ষেপে যাব।”
তিনি জানান, পর্যালোচনার পর কমিশনের নির্দেশনা পেলে আইন-বিধি মেনে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু সময় লাগবে।
২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ভোটের ছয় মাস আগেই রোডম্যাপ অনুযায়ী সম্পন্ন করা হবে নিবন্ধনের পুরো কাজ।
কমিটির সদস্য সচিব ও ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান জানান, তিন-চার ধাপে বাছাইয়ের কাজ চলছে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র যথাযথ রয়েছে কি না গুছিয়ে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, যেসব দলের আবেদন অযোগ্য হবে তাও জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে বিধি অনুযায়ী সঠিকতা যাচাই, আপত্তি-নিষ্পত্তি, মাঠ পর্যায়ে তদন্ত, ত্রুটি সংশোধনে ১৫ দিন সময় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর যোগ্য থাকলে নিবন্ধন সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।
বাছাইয়ের প্রক্রিয়া
-
ন্যূনতম কাগজপত্র ও তথ্য না থাকলে আবেদনপত্র বিবেচনা করা হবে কি না, তা বাছাই কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।
-
কোনো দলের নিবন্ধন নিয়ে কারও আপত্তি রয়েছে কি না দেখবে। বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আপত্তি পেলে দুই পক্ষের শুনানি আবেদন মঞ্জুর বা না মঞ্জুর করতে পারে। আপত্তি না পেলে আবেদন নেবে।
-
প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত-দলিল যাদের রয়েছে, কোনো ধরনের সামান্য ঘাটতি তা ত্রুটি সংশোধনের থাকলে বিধি মেনে তা জমা দিতে সময় দেওয়া হবে। কাগজপত্র জমা না দিলে তো অযোগ্য বিবেচিত হবে; আর জমা দিলেও তা বাছাই কমিটি দেখে করণীয় নির্ধারণ করবে।
-
মাঠ পর্যায়ে তদন্তে পাঠানোর মতো ক’টি দল রয়েছে, বাছাই কমিটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। এসব দলের আবেদনপত্রের দলিলাদি ও তথ্য সঠিকতা যাছাইয়ে তদন্তে যাবে এবং সংশ্লিষ্ট অনেক নির্বাচন কর্মকর্তা সম্পৃক্ত করা হবে। এ কাজটি করতে সময় লাগবে। কারণ, কেন্দ্রীয় দপ্তর ও কমিটির পাশাপাশি এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলা, ন্যূনতম একশ’ উপজেলার দু’শ ভোটারের সমর্থন তালিকা রয়েছে। অসত্য তথ্য মিললেই ঝরে যাবে।
-
কোনো রকম বাছাইয়ে উৎরে যাওয়ার মতো দল থাকলেও শেষধাপে নিবন্ধন সার্টিফিকেট পাবে, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করে ইসি। জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ৯৮টি আবেদন থেকে কয়েকটি একাধিকবার হওয়ায় বাদ দিয়ে ৯৩টি দলের আবেদন পেয়েছে বলে জানানো হয়।
বাতিল হয়েছে ৫টি দলের নিবন্ধন
-
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সাল থেকে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর এক যুগে ৪৪টি দল নিবন্ধন পেয়েছে। কিন্তু শর্ত পূরণে ব্যর্থ এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (ফ্রিডম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন পরে বাতিল করা হয়।
-
২০০৮ সালে নবম সংসদের আগে ১২৬টি আবেদনের মধ্যে নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। পরবর্তীতে ১টি দলের (ফ্রিডম পার্টি) নিবন্ধন বাতিল হয়।
-
এরপর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ৪৩টি আবেদনের মধ্যে তিনটি দল নিবন্ধন পেয়েছে। বাতিল হয় আরও ১টি (জামায়াত) দলের নিবন্ধন।
-
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ৭৬টি দল আবেদন করলেও একটি নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয় নি। আরও একটি দলের (ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন) বাতিল হয়।
-
পরে আদালতে গিয়ে ২০১৯ সালে দুটি দল আদেশ নিয়ে এলে যুক্ত হয়; তবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। ২০২০ সালে একটি দল (পিডিপি) ও সবশেষ ২০২১ সালে নিবন্ধন বাতিল হয় আরেকটি দলের।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়ার পাশাপাশি নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা তা-ও যাচাই করে ইসি। নিবন্ধিত ৩৯ দলের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে।