দুই দশকে দুবার কাউন্সিল হলেও নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটেনি যুব মহিলা লীগে; এতে সাংগঠনিক কার্যক্রম নুইয়ে পড়াসহ নেতাদের বয়সের প্রশ্ন তুলে নেতৃত্বের হাল ধরার সুযোগ চাইছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির অন্য নেতারা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
২০০২ সালে জন্ম নেওয়ার পর থেকে যুব মহিলা লীগের নেতৃত্ব নাজমা আক্তার ও অপু উকিলের হাতে। নেতাকর্মীরা বলছেন, এতদিনেও নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। ‘আধিপত্যের কারণে’ সংগঠনের শৃঙ্খলাও ব্যাহত হচ্ছে।
যুব মহিলা লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাজমা আপা ও অপুদি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন বয়স আমাদের চেয়ে অনেক কম ছিল। তখন নেত্রী (শেখ হাসিনা) তাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমরা এতদিন সংগঠন করেও দায়িত্ব পেলাম না!
“আমাদের মধ্যে অনেকেই সংগঠন সুন্দরভাবে পরিচালনা করার যোগ্যতা আছে, কিন্তু কেন বারবার উনাদের দিচ্ছেন।”
যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বে জটলার প্রশ্নে সায় দিয়ে নতুনদের সুযোগ দেওয়ার কথা বললেন সভাপতি নাজমা। এনিয়ে অপু উকিলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুই দশক আগে শুরুতে নাজমা আক্তারকে আহ্বায়ক করে যুব মহিলা লীগের ১০১ সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন অপু।
দুই বছর পর ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের কমিটি হয়; নাজমা সভাপতি হন এবং অপু হন সাধারণ সম্পাদক।
তার ১৩ বছর পর ২০১৭ সালের ১১ মার্চ সম্মেলন হলেও ফের নাজমাকে সভাপতি ও অপুকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
নেত্বত্বে জটের অভিযোগ তুলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় এক সহ সভাপতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০ বছর ধরে উনারাই নেতৃত্বে, তাহলে অন্যরা কীভাবে সংগঠন করব?”
তার ভাষায়, এক সময় সক্রিয় যুব মহিলা লীগ এখন ঝিমিয়ে পড়েছে, সাংগঠনিক কার্যক্রমেও স্বকীয়তা হারাতে বসেছে।
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক পারভীন চাঁদ মীশু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যারা যুব মহিলা লীগ করছি, সম্মেলনের মাধ্যমে ভালো জায়গায় যাব, সেটা আমরা আশা করতেই পারি। আমরা চাই, যারা দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্র রাজনীতি শেষ করে যুব মহিলা লীগের সঙ্গে যুক্ত ত্যাগী তাদের মুল্যায়ন করা হবে।”
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ফারজানা আক্তার সুপর্নাও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু দির মাধ্যমে সদস্য হয়ে প্রবেশ করেছিলাম, এখন সহ সম্পাদক। আগামী নেতৃত্বর জন্য সম্মেলনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।”
বয়স বাড়ে, জট ছাড়ে না
যুব মহিলা লীগ গঠনের সময় ৩৫ বছর বয়সে দায়িত্বে আসেন সভাপতি নাজমা, অপুর বয়স ছিল ৩১ বছর। সেই হিসেবে বর্তমানে নাজমার বয়স ৫৫ আর অপুর বয়স ৫১ বছর।
এ ছাড়া সংগঠনের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স পঞ্চাশের উপরে। ১২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্তত এক-পঞ্চমাংশ নেত্রীর বয়স এমন। এছাড়া কমিটির অন্তত ১৭ জন এখন রাজনীতির বাইরে। দলীয় কোনো অনুষ্ঠানেও তাদের দেখা যায় না।
ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নেওয়ার পর যুব মহিলা লীগ করতে আসা নারীরা নেতৃত্বের জটে আটকে পড়েছেন। বয়স বাড়লেও তাদের নেতৃত্বে পরিবর্তন হচ্ছে না।
সংগঠনের একজন সহ-সভাপতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাজমা আপা আর অপু দি ছাত্রলীগ শেষ করেই যুব মহিলা লীগের দায়িত্ব নিয়েছেন; ২০ বছর ধরে আছেন দায়িত্বে। আমরা যারা ১০/১২ বছর ধরে সংগঠন করি, তারা সবাই নেতৃত্বে আসার মতো। কিন্তু দীর্ঘ দিনে উনারা দায়িত্বে থাকার কারণে আমাদের বয়সও পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই, দায়িত্ব পাব কবে?”
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিজেদের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন সংগঠনের সভাপতি নাজমা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মনে করি,পঞ্চাশের পর আর যুব মহিলা লীগ করার করার দরকার নাই। আওয়ামী লীগের তো আরও সংগঠন আছে, এখানেই কেন থাকতে হবে। ৫০ বছর বযসের বেশি সবার যুব মহিলা ছেড়ে দেয়া উচিৎ, তাহলে অন্যরা সুযোগ পাবে।
“আমাদের যাই হোক না কেন, আমি চাই পঞ্চাশ বছরের বেশি কেউ যেন এই সংগঠন না করে, তাহলে নতুনদের জায়গা হয় না। কারণ বড় অঙ্কের একটা অংশ ছাত্রলীগ ছেড়ে যুব মহিলা লীগ করতে আসে, কিন্তু দায়িত্ব দেওয়ার মতো জায়গা থাকে না।”
বয়সের প্রসঙ্গের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এখন অসুস্থ।
পুরনোদের বাদ দিয়ে ভবিষ্যতে সংগঠনে নতুনদের আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক মীশু।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভবিষ্যতে অবশ্যই ইয়াংদের নেতৃত্বে আনা উচিৎ, সেটা আমরা চাই। আর বয়সেরও একটা নির্দিষ্ট সীমা রেখা করে দেওয়া উচিৎ। তাইলে ভালোই হয়।”
সম্মেলন কবে
মাস দুয়েক আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যুব মহিলা লীগ নেতৃত্বকে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জানতে চাইলে অপু উকিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সম্মেলনের কোনো নির্দেশনা নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) কাছ থেকে পাইনি।”
এদিকে সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সভাপতি নাজমা।
তিনি বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের দপ্তরে এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছি সম্মেলনের তারিখ দেওয়ার জন্য।
“কবে নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী) ফ্রি আছেন, এমন কোনো তারিখ আমাদের এখনও জানানো হয়নি। আমাদেরকে নেত্রী তারিখ দিলেই আমরা সম্মেলন আয়োজন করব।”
কবে নাগাদ যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের কথা ভাবছেন-জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি ইতোমধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। এখন তারা নেত্রীর শিডিউল চেয়েছে, নেত্রীর শিডিউল পেলেই সম্মেলন হবে।”