বিশ্রাম শেষে ফিরে বিস্ফোরক এক ইনিংস খেললেন কেন উইলিয়ামসন। তাকে সেভাবে সঙ্গ দিতে পরলেন না কেউ। তাই সংগ্রহ খুব একটা বড় হলো না নিউ জিল্যান্ডের। পাকিস্তানের মন্থর শুরুর পর সেই রানই হয়ে গিয়েছিল পাহাড়সম। তবে তিনটি ক্যামিও ইনিংস সেখানে থেকে দলকে জয় এনে দিলেন মোহাম্মদ নাওয়াজ, হায়দার আলি ও ইখতিখার আহমেদ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার ৫ উইকেটের জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতল বাবর আজমের দল। ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের ১৬৩ তিন বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে যায় পাকিস্তান।
৩৮ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে ৫৯ রান করেন উইলিয়ামসন। দলের আর কেউ যেতে পারেননি ত্রিশ পর্যন্ত। পাকিস্তানের ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই। তবে ভীষণ প্রয়োজনের সময় ১৭০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে তিনটি কার্যকর ইনিংস খেলেন নাওয়াজ (২২ বলে ৩৮*), হায়দার (১৫ বলে ৩১) ও ইফতিখার (১৪ বলে ২৫*)।
হ্যাগলি ওভালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেটে হারায় নিউ জিল্যান্ড। নাসিম শাহর প্রথম পাঁচ বলে তিনটি চার মারেন ফিন অ্যালেন। শেষ বলে জায়গা করে নিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি ক্যাচ দেন নাওয়াজের হাতে।
উইলিয়ামস ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে থাকেন। তাই অ্যালেনের দ্রুত বিদায়ের ধাক্কা খুব একটা বুঝতে পারেনি স্বাগিতকরা। আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়েকে বোল্ড করে দেন হারিস রউফ।
গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে দলকে দৃঢ় ভিতের উপর দাঁড় করান উইলিয়ামসন। ১০ ওভার শেষে দলটির রান ছিল ২ উইকেটে ৮৩। সেখান থেকে শেষ ১০ ওভারে কেবল আর ৮০ রান করতে পারে নিউ জিল্যান্ড।
৩৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে আর এগোয়নি স্বাগতিকদের তৃতীয় উইকেট জুটি। একটি করে ছক্কা ও চারে ২২ বলে ২৯ রান করা ফিলিপসকে ফিরিয়ে দেন নাওয়াজ।
৩৩ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া উইলিয়ামসন এরপর টেকেননি বেশিক্ষণ। শাদাব খানকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লংঅনে ধরা পড়েন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক।
১৯তম ওভারে পরপর দুই বলে ফেরেন মার্ক চ্যাপম্যান ও জিমি নিশাম। নাসিমের বলে লংঅফে ক্যাচ দেন চ্যাপম্যান। ১০ বলে ১৭ রান করে রান আউট হন নিশাম। শেষ ২ ওভারে কেবল ১২ রান করে নিউ জিল্যান্ড।
শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান দেওয়া রউফ পাকিস্তানের সফলতম বোলার। ২২ রানে তিনি নেন ২ উইকেট। নাসিম ২ উইকেট নেন ৩৮ রানে।
রান তাড়ায় পঞ্চম ওভারে ভাঙে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ বোলিং করা মাইকেল ব্রেসওয়েলকে স্লগ সুইপের চেষ্টায় উইলিয়ামসের হাতে ধরা পড়ে বাবর। ভাঙে ২৯ রানের জুটি।
একাদশ ওভারে শান মাসুদকেও ফিরিয়ে ফেরার অফ স্পিনার ব্রেসওয়েল। দারুণ বোলিংয়ে তিনিই জেতেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার।
শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০০ রান। এমন সমীকরণ মেলাতে পাকিস্তানকে সাহায্য করতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান। ২৯ বলে ৩৪ রান করে দ্বাদশ ওভারে ইশ সোধির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান এই ওপেনার।
হায়দার ক্রিজে গিয়েই তোলেন ঝড়। সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন নাওয়াজ। দুই জনের জুটিতে রান আসতে থাকে বানের স্রোতের মতো। তাদের ২৬ বলে গড়া ৫৬ রানের জুটি ভাঙে হায়দারের বিদায়ে। এই জুটিতেই সমীকরণ অনেকটা চলে আসে হাতের নাগালে।
আসিফ আলির দ্রুত বিদায়ের পর ইফতিখারকে নিয়ে বাকিটা সারেন নাওয়াজ।
নিউ জিল্যান্ডের দুই স্পিনারের দিন কেটেছে দুই রকম। মাত্র ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন ব্রেসওয়েল। লেগ স্পিনার সোধি ১ উইকেটে পেয়েছেন ৫৮ রান দিয়ে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬৩/৭ (অ্যালেন ১২, কনওয়ে ১৪, উইলিয়ামসন ৫৯, ফিলিপস ২৯, চ্যাপম্যান ২৫, নিশাম ১৭, ব্রেসওয়েল ১*, সোধি ২, সাউদি ০*; নাসিম ৪-০-৩৮-২, রউফ ৪-০-২২-২, ওয়াসিম ৪-০-৩৭-০, শাদাব ৪-০-৩০-১, নাওয়াজ ৪-০-৩৩-১)
পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১৬৮/৫ (রিজওয়ান ৩৪, বাবর ১৫, মাসুম ১৯, নাওয়াজ ৩৮*, হায়দার ৩১, আসিফ ১, ইফতিখার ২৫*; সাউদি ৪-০-৩৩-১, বোল্ট ৪-০-২৮-০, ব্রেসওয়েল ৪-০-১৪-২, টিকনার ৩.৩-০-৩৩-১, সোধি ৪-০-৫৮-১)
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নাওয়াজ