ডাক বিভাগের নামে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ এর লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
নগদ এর লাইসেন্সের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই রুল জারি করে।
মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাময়িক লাইসেন্স নেওয়ার পর ২০১৯ সাল থেকে ‘অননুমোদিত ও বেআইনিভাবে’ নগদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ‘মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ২০১৮ ও ২০২২- এর প্রবিধান অনুসারে কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি’ ঘোষণা করা হবে না– তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সেই সঙ্গে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এর ২০২২ প্রবিধান লঙ্ঘন করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় নগদের সাময়িক নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না– রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমের ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক ও নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টার, দ্য নিউ এজ ও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নগদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও লাইসেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২৭ অক্টোবর হাই কোর্টে ‘জনস্বার্থে’ এ রিট মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ও মো. হাসান উজ জামান।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামাল হোসেন মিঞাজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
আইনজীবী কামাল হোসেন মিঞাজী পরে বলেন, নগদ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ব্যবসা শুরু করে ২০১৯ সালে। তার আগে এই সেবাটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস রেগুলেশন- ২০১৮’ নামে একটি প্রবিধান করা হয়।
সেখানে বলা হয়, এই আর্থিক সেবা দিতে হলে সেবাদানকারী কোম্পানিকে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগী সত্তা হতে হবে। কিন্তু লাইসেন্স নেওয়ার সময় বা পর নগদ কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগী ছিল না। ২০১৮ সালের প্রবিধান সংশোধন ও যুগপোযোগী করা হয় চলতি বছর।
সংশোধিত প্রবিধানের কথা তুলে করে এ আইনজীবী বলেন, “আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান শুধু ব্যাংক না, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সহযোগী হলেও চলবে। কিন্তু নগদ এখন পর্যন্ত কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সহযোগী না।”
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সহযোগী হিসেবে বাজারে নগদের পরিচিতির বিষয়ে আইনজীবী মিঞাজী বলেন, “নগদ ডাক বিভাগের কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান নয়। জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নগদের কোম্পানি ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে আমরা আদালতকে দেখিয়েছি, নগদে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ১ শতাংশও অংশীদারিত্বও নেই।”
কিন্তু প্রবিধান অনুযায়ী আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে এই আইনজীবীর ভাষ্য।
এ বিষয়ে নগদের পাবলিক কমিউনকেশন্স বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম সজল ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, “নতুন নতুন সেবা উদ্ভাবন এবং সেবায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নানান কৌশলে একের পর এক নগদ-এর নামে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এই রিট তারই অংশ।”
নগদ আইনগতভাবেই এর মোকাবিলা করবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “নগদ নিশ্চিত করে বলছে যে, ডাক বিভাগের সাথে নগদ-এর পরিষ্কার চুক্তি আছে। যে চুক্তির সুবাদে প্রতি বছর নগদ তার আয় থেকে ৫১ শতাংশ নিয়মিত ভিত্তিতে ডাক বিভাগকে দিয়ে আসছে। ঘটনাচক্রে আজই ডাক ভবনে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের কাছে ২০২১-২২ অর্থ বছরের রেভিনিউয়ের ৫১ শতাংশ, সাড়ে চার কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হল।
“আগের অর্থ বছরেও নগদ ডাক বিভাগকে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং তার আগের অর্থ বছরে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা রেভিনিউ শেয়ার করেছে। প্রতিবারই ডাক বিভাগের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রী-সচিব নগদ-এর রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের অংশগ্রহণ করেছেন। এটা প্রমাণ করে যে, ডাক বিভাগ ও নগদ-এর মধ্যে পরিষ্কার সম্পর্ক বিদ্যমান।”