করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধ হুট করে শিথিল করায় সৃষ্ট ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তাদের দেওয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় চীনের স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) দৈনিক কোভিড শনাক্ত ও মৃত্যুর তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
“হিসাব রাখতে ও গবেষণার জন্য চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন কোভিড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করবে,” রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে এনএইচসি এমনটাই বলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কেন এই পরিবর্তন, আর চীনের সিডিসি কতদিন পরপর কোভিডের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করবে সে সম্বন্ধে কিছু বলেনি তারা।
কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অসংখ্য শহরের কোটি কোটি বাসিন্দাকে মাসের পর মাস ক্লান্তিহীন লকডাউন ও কঠোর সব বিধিনিষেধের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।
তিতিবিরক্ত নাগরিকরা এ বছরের দ্বিতীয় ভাগে ফুঁসে উঠলে বেইজিংও তাদের ‘শূন্য কোভিড’ নীতিতে পরিবর্তন এনে বিধিনিষেধ একে একে তুলতে শুরু করে।
সংক্রমণের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দৈনিক শনাক্ত-মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ বন্ধের আগের চারদিন এনএইচসি দেশজুড়ে কোভিডে কোনো মৃত্যু হয়নি বলেও জানিয়েছিল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
চীন অবশ্য তাদের কোভিডে মৃত্যুর সংজ্ঞা বদলে কেবল করোনাভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া ও শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুকে্ই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল; তাদের এই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চোখ কপালেও উঠে গিয়েছিল।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যতথ্য প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটি কয়েকদিন আগে চীন এখন কোভিডে প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি আক্রান্ত ও ৫ হাজারের বেশি মৃত্যু দেখছে বলে ধারণা দিয়েছিল।
নভেম্বরের শেষদিকে দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা আগের রেকর্ড ভাঙার পর চলতি মাসে এনএইচসি উপসর্গবিহীন আক্রান্তের সংখ্যা বন্ধ করে দেওয়ায় দেশটিতে সংক্রমণ পরিস্থিতি ও সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যার হিসাব রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও চীনজুড়ে এখন কোভিড শনাক্তে পরীক্ষার পরিমাণ কমেছে, যে কারণে তাদের তথ্যে এমনিতেও বিশ্বাস রাখা যাচ্ছিল না; চীন তাদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিমাণ কমিয়ে বলে বলেও অনেকের সন্দেহ আছে।
অবশ্য কেবল চীনই নয়, যুক্তরাষ্ট্রও অনেকদিন ধরে কোভিডে শনাক্ত-মৃত্যুর হিসাব প্রতিদিন না দিয়ে এক সপ্তাহ পরপর দিয়ে আসছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনের হিসাব সংগ্রহের যে ঝক্কি, তা এড়াতে এই পরিবর্তন বলে দাবিও করে আসছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিধিনিষেধ শিথিল করার পর কোভিড নিয়ে নতুন কতজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চীনের কাছ থেকে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্যই পায়নি তারা।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির কর্তৃপক্ষ রোগীর সংখ্যা হিসাব করতে খাবি খাওয়ায় এমনটা হতে পারে বলেও ধারণা করছে তারা।
চীনজুড়ে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশটিতে কোভিডে মৃত্যু ২০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে বলে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক মডেল ও প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে। তড়িঘড়ি বিধিনিষেধ শিথিলে দেশটির বয়স্ক নাগরিক ও টিকা না নেওয়া ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন, বলা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে।
রোগীর সংখ্যা চীনের স্বাস্থ্য কাঠামোর ওপরও ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে, অনেক জায়গায় অসুস্থ কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে, কোথাও কোথাও অবসর নেওয়া কর্মীদেরও ফের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
জানুয়ারিতে চান্দ্র নববর্ষের সময়, যখন বিপুল সংখ্যক লোক বাড়ি ফিরবে, তখন রোগীর চাপ ঠেকাতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ারও তাগিদ দিয়েছে তারা।