দূষণ কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে বেসকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহ যোগাতে বাংলাদেশের জন্য ২৫ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্মসূচির আওতায় এই ঋণ শোধ করতে পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ।
‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফর্মেশন’প্রকল্পের আওতায় এই তহবিলের অর্থ সরকার ব্যয় করবে দূষণ হ্রাস এবং পরিবেশ আইন কার্যকর করার প্রশাসনিক ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজে।
নির্দিষ্ট কিছু খাতে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ এবং বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে একটি পরিবেশবান্ধব ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম গড়ে তুলতেও এ ঋণের অর্থ ব্যবহার করা হবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, তাদের ঋণের অর্থে সফলভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে দূষণ কমবে এবং ঢাকা ও আশপাশের এলাকার ২ কোটি ১০ লাখের মানুষ উপকৃত হবে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ডানডান চেন বলেন, “দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নগরায়ণের জন্য বাংলাদেশকে দূষণ আর পরিবেশগতভাবে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। দূষণ কেবল স্বাস্থ্য সমস্যাই বাড়াচ্ছে না, অর্থনৈতিকভাবে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে।
“পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী। এই তহবিলের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও কার্যকরভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।”
এ প্রকল্পের আওতায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে চারটি যানবাহন পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যেসব কেন্দ্রে বছরে ৪ হাজার ৬০০ গাড়ির ফিটনেস ও অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করে দেখা যাবে।
বছরে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষম একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রও গড়ে তোলা হবে এই ঋণের টাকায়, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে বছরে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ১০ লাখ মেট্রিক টন কমানো সম্ভব হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং এই প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা জিয়াং রু বলেন, “ঢাকায় উচ্চ মাত্রায় বায়ু দূষণের কথা আমরা প্রায়ই খবরে দেখি। বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয়েছে, তার এক পঞ্চমাংশের পেছনে ছিল বায়ু দূষণ ও সীসা দূষণ। আর এই দূষণের কারণে বাংলাদেশের জিডিপির ১২ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে।”
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শক্তিশালী পরিবেশ আইন এবং তার ঠিকঠাক প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ আর পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে উৎসাহ যোগালে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন গ্যাসের নির্গমন ‘নেট জিরো’ পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বিভিন্ন নদীর ২২টি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক পানির মান পরীক্ষার স্টেশনের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে প্রথমবারের মত। এছাড়া নিয়ম মাফিক বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে কি না, সেই নজরদারির জন্য বিভিন্ন শিল্প এলাকায় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।