যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় একদিনে অন্তত ২৩টি ক্ষেপণাস্ত্র মারার পরদিনই উত্তর কোরিয়া ফের তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে সিউল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বৃহস্পতিবার ছোড়া তিন ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি দূরপাল্লার, আর বাকি দুটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, বলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ।
এই তিনটির মধ্যে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও হতে পারে, বলেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।
বুধবার উত্তর কোরিয়া যে দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রেকর্ড গড়েছে, তার মধ্যে একটি দক্ষিণ কোরিয়ার জলসীমার খুব কাছাকাছি গিয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এর পাল্টায় সিউলও দুই কোরিয়ার কার্যকর জলসীমা নর্দান লিমিট লাইনের (এনএলএল) উত্তরে তিনটি এয়ার-টু-গ্রাউন্ড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
এমন এক সময়ে উত্তর কোরিয়া তার আশপাশের জলসীমায় একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে যখন কাছেই দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যকার বৃহত্তর যৌথ আকাশ মহড়া করছে।
এই মহড়াকে ‘আগ্রাসী ও উসকানিমূলক’ অভিহিত করে এর কড়া সমালোচনাও করেছে পিয়ংইয়ং।
বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ছোড়া প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে জাপানের সরকার দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় অনেক এলাকায় সতর্কবার্তা জারি করে সেখানকার বাসিন্দাদের চার দেয়ালের ভেতর থাকতে পরামর্শ দিয়েছিল।
টোকিও প্রথমে বলেছিল, ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। কিন্তু পরে তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা জানান, পিয়ংইয়ংয়ের ছোড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র জাপান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করতে পারেনি, বরং জাপান সাগরে উধাও হয়ে গেছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা উত্তর কোরিয়া এ একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে একে ‘জুলুম’ অভিহিত করেছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন-ডং ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান নিজেদের মধ্যে ফোনালাপে পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকে ‘দুঃখজনক, অনৈতিক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
গত মাসেই উত্তর কোরিয়া জাপানের ওপর দিয়ে ৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। কোরীয় উপদ্বীপ ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় চলতি বছর দেশটি রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
নানান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় পর্যদুস্ত হলেও পিয়ংইয়ং ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ছয়বার পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। শিগগিরই তারা সপ্তম পরীক্ষাটি চালানোর পরিকল্পনা করছে বলেও অনুমান পশ্চিমা গোয়েন্দাদের।
ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও দেশটি তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো অব্যাহত রেখেছে, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের লংঘন।
উত্তর কোরিয়ার এ সামরিক অগ্রগতিকে প্রতিবেশী দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও নৌযানের উপস্থিতিও বেড়েছে।