আওয়ামী লীগ এখনও জনস্রোত দেখায়নি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “ডিসেম্বরে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাবেন, একটু অপেক্ষা করুন।”
বুধবার খিলগাঁও মডেল কলেজ প্রাঙ্গণে কয়েকটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে কাদের বলেন, “দুই-তিনটা সমাবেশ করে ফখরুলের ভাবখানা এমন যে, ক্ষমতায় এসেই গেছেন। এত সোজা না... এত সোজা না, খেলা হবে। খেলা হবে, রাজপথে খেলা হবে, আন্দোলনে খেলা হবে, ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে খেলা হবে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। লুটপাটের বিরুদ্ধে, ভোটচুরি বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে।”
“কথায় কথায় শুধু ঢল নামে। জনস্রোততো এখনও দেখেননি। ডিসেম্বরে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাবেন। একটু অপেক্ষা করুন। লোকের ঢল কাকে বলে দেখবেন।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত বিএনপি নেতাদের মাথা থেকে নামানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এই ভূত বাংলার মানুষ নিষিদ্ধ করেছে, উচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছে, আর তত্ত্বাবধায়ক চিন্তা করে লাভ নেই। ফখরুল ক্ষমতার রঙ্গিন খোয়াব দেখছেন। এখনও দেখেননি কত ধানে কত চাল। সময় আসছে বুঝিয়ে দেব।”
রিজার্ভ নিয়ে বিএনপির মন্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তারা কোন মুখে রিজার্ভের কথা বলে। রিজার্ভ আমরা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছি। এখন বৈশ্বিক সংকটের কারণে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বিএনপির রিজার্ভ কত ছিল? বিএনপির সময়ে ৪ দশমিক ৮ অর্থাৎ ৫ বিলিয়নও ছিল না।”
বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ নিয়ে হায়রে কাণ্ড, দৌড় রে… দৌড়। বেশি দূরে নয়। শনির আখড়ার দৌড়। ভুলে গেছেন? ফখরুল সাহেব শনির আখড়ায় পাবলিকে দৌড়ায়। পাবলিকে দৌড় দেয়।
“বিদ্যুৎ নিয়ে ফখরুল বড় বড় কথা বলেন। এই বৈশ্বিক সংকেটর আগে দেশে কোনো বিদ্যুতের অভাব ছিল না। গ্যাসের অভাব ছিল না। অথচ বিএনপির সময়ে বিদ্যুতের বদলে শুধু খাম্বা ছিল।”
বিএনপিকে ‘বাংলাদেশ নালিশ পার্টি’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “তারা ক্ষমতায় আসতে বিভিন্ন দেশের দারস্থ হয়। আমরা এই রাজনীতি করি না। জনগণ ভোট দিলে আমরা ক্ষমতায় থাকব না দিলে থাকব না।”
সংবিধানের কোনো পরিবর্তন হবে না জানিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “বিএনপি এখন সংবিধান পরিবর্তন করবে। ডিসেম্বরে বুঝিয়ে দেব সংবিধান পরিবর্তনের দুঃসাহস কি করে হল। মাথা থেকে নামাতে হবে। এই পবিত্র সংবিধান লাখো শহীদের রক্তে মাখা... অনেক কচুকাটা করেছেন। সংবিধানকে আর বাংলার জনগণ কচুকাটা করতে দেবে না।”
বিএনপি লন্ডনের রিমোট কন্ট্রোলে চলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ওখান থেকে ফরমায়েশ করে আর এখানে ফখরুল নাচেন। যেমনি নাচায় তেমনি নাচে। পুতুলের মত। পুতুলের কি দোষ।
“ফখরুল সাহেব নাচানাচি করছেন আন্দোলনের নেতা কে? নির্বাচনের নেতা কে? দণ্ডিত আসামি যে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে ২০০৮ সালে। এই নেতা কি মেনে নেবে বাংলাদেশের জনগণ? শেখ হাসিনার মতো যোগ্যতা, সততা, দক্ষতা আর কারও আছে এদেশের?”
ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল নেতাদের সম্মেলন শেষে দ্রুত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে, দলটাকে বাঁচান।
“কমিটি করতে টাকা লাগবে না। এটা বিএনপির হতে পারে। আওয়ামী লীগ এটা প্রাকটিস করতে পারে না। টাকা পয়সা নিয়ে মনোনয়ন, টাকা পয়সা নিয়ে কমিটি গঠন; এটা চিরতরে বন্ধ করতে হবে শেখ হাসিনার নির্দেশ। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বন্ধ করতে হবে। একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের নামে দুর্নাম বন্ধ করতে হবে।”
বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের কষ্টের কথা উল্লেখ করে সমবেদনা জানিয়ে কাদের বলেন, “জনগণ কষ্টে আছে আমরা বুঝি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মানুষের কষ্টও বেড়েছে। গরীব মানুষের কষ্ট, নিম্ন মধ্যবিত্ত স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
“এ কষ্টের কথা আমরা জানি, আমরা বুঝি, শেখ হাসিনা বোঝেন। তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় আপনাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে। আজকের এই সংকটে উত্তরণের জন্য তিনি দিবারাত্র পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, চেষ্টা করছেন। একটু ধৈর্য ধরেন।”