প্রত্যাশিত জয় দিয়েই নারী এশিয়া কাপ ধরে রাখার অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে আলো ছড়ানো দলটির সঙ্গে লড়াইও করতে পারেনি থাইল্যান্ড। তাদের একশর নিচে থামিয়ে শামিমা সুলতানার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে অনায়াসেই জিতেছে নিগার সুলতানার দল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সিলেটে শনিবার টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ৯ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডের ৮২ রান পেরিয়ে গেছে ৫০ বল বাকি থাকতে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মেয়েদের এর চেয়ে বড় জয় আছে কেবল একটি। ২০১৯ সালে নেপালের বিপক্ষে জিতেছিল ১০ উইকেটে। ৯ উইকেটে জিতল তৃতীয়বার, এর দুটিই থাইল্যান্ডের বিপক্ষে।
কদিন আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ লড়াই করেছিল থাইল্যান্ড। হেরেছিল কেবল ১১ রানে। এবার আর তাদের দাঁড়াতেই দেননি ফারজানা হক-রুমানা আহমেদরা।
এক সময়ে থাইল্যান্ডের রান ছিল ২ উইকেটে ৫৪। সেখান থেকে মাত্র ২৮ রানে সফরকারীদের শেষ ৮ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। এতে সবচেয়ে বড় অবদান রুমানার। অভিজ্ঞ এই লেগ স্পিনার ৯ রানে নেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন নাহিদা আক্তার, সানজিদা আক্তার ও সোহেলি আক্তার।
খুনে ব্যাটিংয়ে দলকে পথ দেখান শামিমা। ৩০ বলে ১০ চারে এই ওপেনার খেলেন ৪৯ রানে বিস্ফোরক ইনিংস। ফারজানার সঙ্গে ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটিতে মূল কাজটা করে দেন তিনিই।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অ্যাকাডেমি গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দ্রুতই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে থাইল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে টানেন নাথাকান চানথাম ও ফানিতা মায়া। দুই জনে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৩৮ রানের জুটি।
দ্বাদশ ওভারে এক পর্যায়ে থাইল্যান্ডের রান ছিল ২ উইকেটে ৫৪। ক্রিজে তখন দুই জন থিতু ব্যাটার। এখান থেকে একশ ছাড়ানো রান পাওয়া খুব কঠিন কিছু ছিল না। তবে স্পিনারদের দারুণ বোলিংয়ে এর অনেক আগেই থেমে যেতে হয় তাদের।
সোহেলির ঝুলিয়ে দেওয়া বলে তুলে মারার চেষ্টায় মায়ার বিদায়ে ভাঙে থাইল্যান্ডের প্রতিরোধ। এরপর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি তারা। এক প্রান্ত আগলে রাখা চানথামকে বিদায় করেন সালমা খাতুন।
মিডল অর্ডারে ছোবল দেন রুমানা। ছানিদা সুথিরুয়াং, ওনিচা কামচোমফু ও নাতিয়া বুচাথামকে দ্রুত বিদায় করেন এই লেগ স্পিনার।
৭ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়া দলকে কক্ষপথে ফেরাতে পারেননি পরের ব্যাটাররা। দুই বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় থাইল্যান্ড।
শামিমার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এই রান নিয়ে লড়াইও করতে পারেনি দলটি। দ্বিতীয় ওভারে দুটি চার মেরে ডানা মেলেন কিপার-ব্যাটার শামিমা। চতুর্থ ওভারে সুথিরুয়াংকে মারেন তিন চার।
প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি মারছিলেন শামিমা। অন্য প্রান্তে ফারজানা যেন ছিলেন স্রেফ দর্শক হয়ে। অষ্টম ওভারে কামচোমফুকে ছক্কায় ওড়িয়ে রানের গতি বাড়ান তিনিও।
মাত্র ১ রানের জন্য পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি শামিমা। থিপাৎচা পুথাওংকে সুইপ করার চেষ্টায় থামেন তিনি। উইকেটের সামনে-পেছনে দারুণ পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই।
নিগারকে নিয়ে বাকিটা সারেন ফারজানা। ২৯ বলে এক ছক্কা ও দুই চারে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করা নিগার ১১ বলে করেন ১০।
নিজেদের পরের ম্যাচে আগামী সোমবার সকাল ৯টায় পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
থাইল্যান্ড নারী দল: ১৯.৪ ওভারে ৮২ (কোনচারোয়েনবাই ৮, চানথাম ২০, চাইওয়াই ২, মায়া ২৬, সুথিরুয়াং ১, কামচোমফু ১, তিপোচ ১০, বুচাথাম ০, কানোহ ১১, পুথাওং ০, লাউমি ০*; সালমা ৪-০-১৮-১, নাহিদা ৩.৪-১-১১-২, সানজিদা ৪-০-১১-২, সোহেলি ৩-০-১৮-২, জাহানারা ২-০-১৫-০, রুমানা ৩-১-৯-৩)
বাংলাদেশ নারী দল: ১১.৪ ওভারে ৮৮/১ (শামিমা ৪৯, ফারজানা ২৬*, নিগার ১০*; বুচাথাম ২-০-১০-০, সুথিরুয়াং ২-০-২৫-০, পুথাওং ৪-০-২৩-১, তিপোচ ১-০-৬-০, কামচোমফু ১-০-১৪-০, লাউমি ১.৪-০-৮-০)
ফল: বাংলাদেশ নারী দল ৯ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: শামিমা সুলতানা