Loading...
The Financial Express

ত্রিপুরা ক্লাব থেকে কুমিল্লা ক্লাব: ঐতিহ্যের শত বছর


ত্রিপুরা ক্লাব থেকে কুমিল্লা ক্লাব: ঐতিহ্যের শত বছর

বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো ক্লাবগুলোর মধ্যে কুমিল্লা ক্লাবের নাম প্রথম সারিতেই উঠে আসে। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লার ‘এলিট’ শ্রেণির মানুষদের একমাত্র সংগঠন হিসেবে রয়েছে ক্লাবটি। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক দিয়ে কুমিল্লার মানুষদের অহংকারের একটি জায়গা আছে এই ক্লাবটিকে ঘিরে। 

ব্রিটিশ আমলে ঢাকা ক্লাবসহ আরো কয়েকটি ক্লাবের গোড়াপত্তন হয়েছিল। তার মধ্যে কুমিল্লা ক্লাবও আছে। 

কিন্তু কুমিল্লা ক্লাবের নাম প্রথমে কুমিল্লা ক্লাব ছিল না। 

১৯১৭ সালে অভিজাত শ্রেণির লোকদের চিত্তবিনোদনের জন্য ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর। ত্রিপুরার রাজপরিবার ও ব্রিটিশদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল এই ক্লাবে। দেশ বিভাগ, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ- যত ঐতিহাসিক পালাবদল হয়েছে এই অঞ্চলে সেসবের ইতিহাসের অংশ হিসেবেই আছে এই ক্লাবটি।

প্রতিষ্ঠার পর ক্লাবের নাম ছিল টিপ্পারা ক্লাব। এই নাম প্রায় ৪৬ বছর ধরে ছিল। এরপর ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান সমাজ কল্যাণ বিভাগের রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী ক্লাবের নাম বদলে রাখা হয় কুমিল্লা ক্লাব। এবং এই নাম এখনো বহাল রয়েছে। শুরুতে ক্লাবের শুধুমাত্র একটি চৌচালা টিনের ঘর ছিল। ১৯৯২ সালে সেটি ভেঙ্গে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে কুমিল্লা ক্লাবে আছে একটি দোতলা ও একটি পাঁচতলা ভবন। 

বর্তমানে কুমিল্লা ক্লাবসৌন্দর্যের আধার নিয়ে বিরাজ করছে কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র টাউন হলে। ক্লাবের বাইরের নজরকাড়া চাকচিক্য ও সৌন্দর্য মানুষদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও ক্লাবের ভেতরে সদস্যদের জন্য আছে বিশেষ সব সুযোগ-সুবিধা। আধুনিক সভাকক্ষ, বিলিয়ার্ড রুম, টেবিল টেনিস রুম, জিম, সুইমিংপুল, গেস্টহাউজ, ক্যান্টিন, পার্টি সেন্টার, কার্ডরুমসহ নানান ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। 

কুমিল্লা ক্লাব প্রথম থেকেই খেলাধুলার দিকে বিশেষ মনোনিবেশ করেছে। নিয়মিত বিভিন্ন খেলার আয়োজন ও জাতীয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে কুমিল্লা ক্লাব। বিলিয়ার্ড খেলায় জাতীয় পর্যায়ে বরাবরই কুমিল্লা ক্লাব প্রথম সারিতে ছিল। জাতীয় বিলিয়ার্ড টুর্নামেন্টও কয়েকবার আয়োজিত হয়েছে কুমিল্লা ক্লাবে। জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নের স্থানও দীর্ঘদিন ধরে ছিল কুমিল্লা ক্লাবের।

কুমিল্লা ক্লাব শুধুমাত্র সদস্যদের চিত্তবিনোদনের জন্যই কাজ করে না। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে দেশের দুর্যোগের সময় ক্লাবের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কুমিল্লা ক্লাব সবসময়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবের সাথে কুমিল্লা ক্লাবের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। ২০১৭ সালে কুমিল্লা ক্লাবের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় ছিল ক্লাবের আয়োজন। 

কুমিল্লায় যত ভিআইপি মানুষেরা আসেন, তারা সবাই-ই কুমিল্লা ক্লাবে অবস্থান করে থাকেন। মন্ত্রী, এমপি, বিদেশের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে শিল্পপতিদেরও কুমিল্লায় অবস্থানের জন্য প্রথম পছন্দ কুমিল্লা ক্লাব। অতিথিদের জন্য ক্লাবে রয়েছে আটটি এয়ার কন্ডিশন্ড রুম। এছাড়াও আছে মাল্টি-কুইজিন রেস্টুরেন্ট। 

ক্লাবে বর্তমানে ৬০০ জনের ও বেশি সদস্য আছেন। দাতা সদস্য হিসেবে আছেন একাধিক ব্যক্তি। পদাধিকারবলে ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার। সভাপতি মন্ডলীতে আছেন তিনজন সহসভাপতি। এছাড়াও কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে আছেন কয়েকজন বিজ্ঞ সদস্য। 

ফাইয়াজ আহনাফ সামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic