বিআরটি প্রকল্পের কারণে এমনিতেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীর গতি ছিল; ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে টানা ভারী বৃষ্টিতে সেখানে খানাখন্দ তৈরি হয়ে এখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
গাজীপুরের টঙ্গীর মিল গেইট থেকে মন্নু গেইট পর্যন্ত ১৮৭ মিটার রাস্তা ট্রাফিক বিভাগের কাছে ‘বোতল নেক’ বলে পরিচিত।
মহাসড়কের এই অংশটিই এখন ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মো. আলমগীর হোসেন।
তিনি আরও বলেন, “এ ছাড়া বিআরটির প্রকল্পের জন্য গাজীপুরের চান্দনা—চৌরাস্তার পূর্বদিকে শিববাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি চলাচলে কিছু সমস্যা হচ্ছে।”
গাজীপুর-ঢাকা পথে চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহনের পরিচালক কামরুল হাসান রিপন বলেন, “সিত্রাং এর প্রভাবে বৃষ্টির কারণে খানাখন্দ তৈরি হয়ে সোমবার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচলে ধীরগতি ছিল। কোথাও কোথাও থেমে থেমে যানবাহন চলছিল।”
“আমাদের গাড়িগুলো আগে ঢাকার আজিমপুর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত তিন ট্রিপ দিত। গত দুদিন ধরে এক ট্রিপ দিচ্ছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় গাজীপুর থেকে রওনা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় আজিমপুর পৌঁছেছে। আবার আজিমপুর থেকে দুপুর ১টায় ছেড়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় আব্দুল্লাহপুর পৌঁছেছে।”
ভিআইপি পরিবহনের পরিচালক বলেন, “গাড়ির চাকা ব্লাস্ট হওয়া,স্প্রিংয়ের পাত্তি ভাঙার কথা আর নাই বললাম। এই হচ্ছে অবস্থা।”
ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে উত্তরার বিএনএস টাওয়ার পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওয়ে তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে এর ৭০-৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি ২০-৩০ শতাংশের কাজ শেষে নিচের অংশের কাজ ধরা হবে।
এই কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রী ও পরিবহন চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ১২০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় টানা বৃষ্টিতে এই অংশের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
ঢাকা-গাজীপুর সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের কয়েকজন চালক বলেন, বৃষ্টির প্রভাবে মহাসড়কের নতুন করে খানাখন্দ তৈরি ও পুরনো খানাখন্দগুলো বড় আকার ধারণ করে অনেক জায়গাতেই গর্তে পরিণত হয়েছে।
পুলিশ ও বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা ইট, বালুসহ নানা উপকরণ দিয়ে সেই খানাখন্দ মেরামত করলেও ভারী যানবাহন চলাচল করায় তা উঠে গিয়ে বড় গর্তের তৈরি হয়েছে। এসব খানাখন্দ ও গর্তের কারণেই যানজট হচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, এ মহাসড়কের সমস্যা নিয়ে সড়ক ভবনে সওজের প্রধান প্রকৌশলীর সভাপতিত্বে বুধবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী শুক্র ও শনিবারের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানবাহন চলাচল উপযোগী স্থায়ী রাস্তা করে দেবে বিআরটি কতৃর্পক্ষ।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছি। এ অংশে কোনো গাড়ি ফেঁসে গেলে দুটি রেকার দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করা হচ্ছে।
বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম বলেন, এতোদিন ওই এলাকার রাস্তা চওড়া করতে জমি অধিগ্রহণের কাজ আটকে ছিল। বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর কাজও বাকি ছিল। জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে এ অংশের কাজ শুরু হবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলমান বিআরটি প্রকল্পের অন্যান্য অংশে যানবাহন চলাচলে বড় রকমের কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক।