ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে ধর্মঘটের ‘ভাবনা নেই’ বাস মালিক-শ্রমিকদের


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: December 06, 2022 10:19:56 | Updated: December 06, 2022 18:11:07


রাজশাহীতে ধর্মঘটের সময় গাড়ি না পেয়ে ফুটপাতে বসে দুই নারী। এমন চিত্র বিএনপির প্রায় প্রিতিটি বিভাগীয় সমাবেশের আগে দেখা গেছে।ফাইল ছবি

বিভিন্ন বিভাগে বিএনপির সমাবেশের আগে ধর্মঘট ডেকেছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল ওই সব এলাকার মানুষকে। সব বিভাগের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হতে যাচ্ছে বিএনপির; ফলে সেই সময়ে পরিবহন ধর্মঘট হবে কি না, তা নিয়ে রাজধানীবাসীর রয়েছে উদ্বেগ। à¦–বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। 

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের স্থান নিয়ে টানাপড়েন চললেও এখন পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘটের কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। ছয় দিন আগে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনও ধর্মঘট ডাকার ভাবনা তাদের নেই।

গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে জনসভা দিয়ে শুরু হয়েছিল বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি। চট্টগ্রামের পর খুলনা, বরিশাল, à¦«à¦°à¦¿à¦¦à¦ªà§à¦°, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে জনসভা করে বিএনপি।

এরমধ্যে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ বাদে আর সব সমাবেশের আগে সেই সেই অঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। ময়মনসিংহে ধর্মঘটের ঘোষণা না থাকলেও যানবাহন চলাচল বন্ধই ছিল।

সেই কারণে ঢাকাবাসীর মধ্যেও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘটের শঙ্কা জেগে উঠেছে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী মাহমুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেখানেই বিএনপির সমাবেশ হয়েছে, গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে আগে থেকেই।

“আমি ধারণা করছি ঢাকার সমাবেশ ঘিরেও কিছুটা দুর্ভোগ হবে। যাদের বাসা দূরে তারা কীভাবে আসবে? এইখানে একটা ঝামেলা হতে পারে। এজন্য এটা নিয়ে একটা টেনশন আছে।”

ঢাকার নিকুঞ্জের একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা জাকারিয়া হোসেন বলেন, ৮ ডিসেম্বর তাদের প্রতিষ্ঠানের একটি কারখানা পরিদর্শনের কথা রয়েছে। তবে ১০ তারিখের ধর্মঘট হবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।

“আমাদের একটা থার্ড পার্টি ইন্সপেকশন আছে। কিন্তু ১০ তারিখের সমাবেশের জন্য এখনও ডেট ফিক্সড করতে পারছি না। একটু কনফিউশনে আছি। ইন্সপেকশন পেছালে শিপমেন্ট রিলেটেড অন্য কাজগুলোও পিছিয়ে যায়।”

আশপাশের জেলা থেকে যাদের ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াত, তারাও রয়েছেন উৎকণ্ঠায়।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির ঢাকার মিটফোর্ড, চকবাজার এলাকায় পণ্য সরবরাহ করেন। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকায় যেতে হয়।

হুমায়ুন কবির বলেন, “দুই ধরনের সমস্যায় আছি। যদি ধর্মঘট ডাকে, তাহলে যেতে পারব না, মালও পাঠানো যাবে না। আর সমাবেশের আগে রাস্তায় অনেক সময় আইনশৃঙখলা বাহিনী রাস্তায় তল্লাশি করে। এটা নিয়েও একটা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। আমি নিজেও আতঙ্কে থাকি।”

১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ সামনে রেখে ধর্মঘটের কোনো কর্মসূচি আছে কি না- জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

“বরিশাল, রাজশাহী, ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে, এটার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন কথা হচ্ছে। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর ঘিরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে কি না, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

তিনি বলেন, “এটা আমাদের একক কোনো সিদ্ধান্ত না। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আছে, বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশন আছে… à¦¸à¦¬à¦¾à¦‡ মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি এবং মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, পরিবহন ধর্মঘট ডাকার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

“আমরা কোনো ধরনের ধর্মঘট ডাকতেও চাই না। আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনাও হয় নাই বিষয়টি নিয়ে। আমাদের (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির) মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর আছেন। তিনি যাওয়ার আগে বলে গেছেন যে আমরা কোনো ধর্মঘটে যাব না।”

বিএনপির সমাবেশের আগে পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠনের ব্যানারেও ধর্মঘট ডাকা হয়।

ঢাকার বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারাও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

“আমরা কোনো ধর্মঘট ডাকিনি। তবে গতকাল একটা পত্রিকায় দেখলাম ৮ তারিখ থেকে ধর্মঘট। কারা ডেকেছে, তা বলতে পারব না। পরিবহন ধর্মঘট এটা লিখেছে দেখেছি।”

তবে কারা ধর্মঘট ডেকেছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি পরিবহন মালিক কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের কেউ।।

মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মালিক বা শ্রমিক যে কোনো সংগঠনই ধর্মঘট ডাকুক, আমরা জানব। কিন্তু ৮ তারিখ কেউ ধর্মঘট ডেকেছে বলে আমাদের কারও জানা নেই। তাছাড়া ১০ তারিখের সমাবেশের আগে ধর্মঘট না করতে নির্দেশনা আছে।”

 à¦¬à¦¿à¦à¦¨à¦ªà¦¿à¦° সমাবেশের আগে ধর্মঘট ডাকার ক্ষেত্রে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো সড়কে থ্রি হুইলার বন্ধসহ নিজেদের নানা দাবির কথাই তুলে ধরেছিল।

কিন্তু বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, তাদের সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে সরকারের ইন্ধনেই ধর্মঘট ডেকে বাসসহ অন্যসব যান চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে।

তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, এই ধর্মঘটের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির কর্মসুচি ঘিরে সংঘাতের শঙ্কায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নিজেরাই বাস বন্ধ রাখছেন।

বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশও বলেন, রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে তারা কিছুটা আতঙ্কিত থাকেন।

“বিগত বছরগুলোয় আমরা দেখেছি, পরিবহনে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে পরিবহনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।পরিবহন শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে।”

পরিবহন ধর্মঘট ডাকা কিংবা না ডাকার বিষয়ে কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার কথা বললেও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকায় পরিবহন ধর্মঘট হবে না।

Share if you like