ছোটবেলায় হাঁটতে শেখা থেকে শুরু করে, প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিন, ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার সময় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ই হোক না কেন বাবারা সমসময় বটবৃক্ষের ছায়ার মতো মাথার উপরে থাকেন। জীবনের সর্বস্তরেই তাদের উপদেশ দরকার হয়।
পিতৃস্থানীয় মানুষেরাও এই ভূমিকায় কম যান না। এমন অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন কারণবশতঃ তাদের বাবাকে হারিয়েছেন। তারা কোনো ধরনের সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ কারোর কাছ থেকে, বড় ভাই বোনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন ধরণের পেইজ আছে যারা নিত্যদিনের শলাপরামর্শ দিয়ে থাকে।
এমনই একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ হলো ‘ড্যাড হাও ডু আই’। রব কেনি এই পেইজের প্রতিষ্ঠতা। ‘ড্যাড হাও ডু আই’ ফেইসবুক পেইজটি শুরু করা হয়েছে করোনাকালীন সময়ে ২০২০, এপ্রিল ১৫। তবে ফেইসবুক পেইজের আগে তিনি ইউটিউব চ্যানেলে তার ‘ড্যাডভাইজ’শুরু করেন ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে। যেটি তাকে ‘ইউটিউব ড্যাড’/ ‘ইন্টারনেট ড্যাড’নামে পরিচিতি দিইয়েছে।
পেইজটিতে তিনি বিভিন্ন পরামর্শ এবং উপদেশ দেন। বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক গল্প শোনান। তরুণদেরকে তিনি উজ্জীবিত করেন। তিনি শুধু নিজের মন্তব্যটাই উপস্থাপন করেন না, তিনি আরও বিভিন্নজনের মতামত এবং তাদের পরামর্শ উপস্থাপন করেন এবং সেই মতামত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তরুণদেরকে বোঝান।
রবের পেজটি বড়ই মনোমুগ্ধকর। পেজে টাই বাঁধা থেকে শুরু করে কিভাবে গাড়ির টায়ার পাল্টাতে হবে, নিত্যদিনকার সব সাধারণ কাজ রব শিখিয়ে দেন। তার উদ্দ্যেশ্য ছিল বাবারা যেভাবে সন্তানদের এসব সাধারণ কাজ ভালোবেসে শিখিয়ে দেন, পিতৃহীন কেউ যাতে তার মিষ্টি ভিডিওগুলো দেখে শিখে নিতে পারে, রবের আন্তরিকতাই এই পেজটিকে আরো বিশেষ করে তুলেছে।
এই পেইজেরর মাধ্যমে তিনি তরুণদের শেখাতে চেষ্টা করেন কিভাবে একজন ভালো মানুষ হতে হবে, নিজের মানসিক খেয়াল কিভাবে রাখতে হবে। অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্য তিনি অনুপ্রেরণা দেন। কারণ একজনকে সাহায্য করার পরে যে প্রশান্তি অনুভূত হয় তা অনেক বেশি সুখকর। তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে এটুকু বোঝার জন্য যে আমি যখন নিজের উপর থেকে চিন্তা ভাবনা সরিয়ে অন্যকে সাহায্য করি তখন তার মতো আনন্দ আর কোনো কিছুই আমাকে দিতে পারে না।
অন্যের সাথে সুন্দর করে কথা বললে যেমন সামনের ব্যাক্তিটার ভালো লাগে তেমন তার কাছে সুন্দর কথা বলার ব্যক্তির সম্মানও বেড়ে যায়। অন্যের থেকে ভালো ব্যবহার আশা করতে হলে নিজেকেও ভালো ব্যবহার দিতে হবে। রব এই ব্যপারে বলেছেন, ‘তুমি যদি চাও মানুষ তোমাকে ভালোবাসুক তাহলে তুমি ভালোবাসা পাওয়ার মতো মানুষ হও, তুমি যদি মানুষ তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করুক তাহলে তাদের সাথে সেভাবেই ব্যবহার করো যেভাবে তুমি চাও তারা তোমার সাথে করুক। তুমি যদি যাও পৃথিবী আরও উদার হোক তাহলে তুমি উদার হও।’
ছোট থাকতেই কেনির বাবা মা আলাদা হয়ে যায় এবং তার বাকি ভাইবোনের দায়িত্ব পড়ে তার বাবার উপর। কেনির বয়স যখন ১৪ তখন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং তাকেসহ তার বাকি সাত ভাইবোনকে ছেড়ে চলে যান। টুয়েনটি ওয়ান সেনচুরি ড্যাডস কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমার বয়স ছিলো ১৪। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একটা ১৪ বছর বয়সী বাচ্চা যা নিতে পারে, আমি নিজে কখনোই ওরকম করব না। এবং ওইটাও ছিলো আমার জীবনের বড় একটা লক্ষ্য।’
তিনি ইউএসএ টুডে কে বলেন, ‘যদিও এইটা সহজ ছিলো না কিন্তু আজকে আমি যেমন মানুষ সেই মানুষে পরিণত হতে আমাকে তাকে (তার বাবাকে) ক্ষমা করা দরকার ছিলো। এবং সেইটাই ছিলো আমার জীবনের একটি বড় সন্ধিক্ষণ।’
কেনি টুয়েনটি ওয়ান সেনচুরি ড্যাডস কে আরো বলেন, ‘আমরা উদারতাকে প্রচার করতে চাই। এমন একটা নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে চাই যেখানে যে কেউ এসে এইটা শিখতে পারবে যে এইটা করলে আমাকে কেউ বকবে না।’
রব কেনি জনপ্রিয় তার এই ‘ড্যাডভাইজ’ দেওয়ার জন্য। করোনাকালীন সময়ে যখন গোটা পৃথিবী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলো তখন তার এই উপদেশবাণী, অনুপ্রেরণা তাকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তাকে দেখেছে, তাকে শুনেছে, তাকে মেনেছে।
রব কেনির মেয়ে ক্রিস্টেন পনটেন কোভিডের সময়ে তার বাবার জনপ্রিয়তা নিয়ে বলেন, ‘আমার মনে হয় না অন্য কোনো অবস্থায় এইটা ভাইরাল হতো। এইটা অবশ্যই কোভিডকে কেন্দ্র করেই বিশেষ করে এর শুরুর দিকের সময়ের কারণে।’
বর্তমানে ড্যাড হাও ডু আই ফেইসবুক পেইজের ফলোয়ার সংখ্যা ২৩৮ হাজার এবং ৩ মিলিয়নের বেশি ইউটিউব সাবস্ক্রিপশন।
সুরাইয়া ফাতিমা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ অ সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।