টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ২০টি দেশের জোট জি টোয়েন্টির সামনে ছয়টি প্রস্তাব রেখেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্যা সাউথ সামিট ২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জি টোয়েন্টি জোটের কাছে এসব প্রস্তাব রাখেন তিনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর) প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।”
প্রধানমন্ত্রীর ছয় প্রস্তাব
- মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
- এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিক বৈষম্য মোকাবিলায় নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করা।
- স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়ন।
- নারীসহ সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ দূর করা। তরুণ জনগোষ্ঠীর পেছনে বিনিয়োগ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা আদায়। আর সেজন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর।
- প্রতিটি মানুষের ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার নিশ্চিত করা
- বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার।
শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, গবেষণা সংস্থা এবং অন্যান্য অংশীজনদের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
গুরুত্বপূর্ণ এই শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের একটি দেশ, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি টোয়েন্টির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। আসুন আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যত..।
জি টোয়েন্টির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি টোয়েন্টি প্ল্যাটফর্মকে আরও অর্থবহ করার জন্য তার (নরেন্দ্র মোদী) আন্তরিকতা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতায় মানব উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য আপনার (মোদীর) জোরালো উদ্যোগে অবদান রাখতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রধানমন্ত্রীর বলেন, কোভিড মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট, তার ওপর চোখ রাঙাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক পর্যায়ে সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন ।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি মানুষের মানসম্মত জীবন যাপনের অধিকার নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি আজও প্রাসঙ্গিক।
”গত এক দশকে বাংলাদেশ সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসাবে স্বীকৃত দেশ।
বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, মাত্র এক দশকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ হয়েছে।বাংলাদেশ এলডিসি স্তর থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য সব শর্ত পূরণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তির ওপর উন্নত ভৌত অবকাঠামো দিয়ে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার প্রত্যাশা রাখি।“
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ এবং ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল চালুর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে শিগগিরই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
সরকারের আশ্রায়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পে গৃহহীন ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর দেওয়া হয়েছে।
“আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য আমরা আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পের জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জি টোয়েন্টি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে আমি আশা করি।”