বাংলাদেশকে সোনালি আঁশের দেশ বলার দিন বহু আগেই ফুরিয়েছে। বিশ্বজোড়া বাংলাদেশি পাটের খ্যাতিতেও ভাটা পড়েছে কারণ আগের মতো উৎপাদন আর নেই।
তবুও পাট এখন বহুমুখী ব্যবহার্য। পোশাক থেকে শুরু করে ব্যাগ, চট আর নানান স্টেশনারি তৈরি করা হয় পাট দিয়ে। বাঙালির খাদ্যাভ্যাসেও পাট এখন তুমুল জনপ্রিয়। কচি পাটের পাতা তথা পাট শাক - মিঠা ও তিতা, দুটোই শাক হিসেবে জনপ্রিয়।
কিন্তু পাটপাতার চা? কবে কে ভেবেছিল পাটপাতা দিয়েও চা হতে পারে! পাটপাতার চা এখন কেবল সত্যিই নয়, দেশেই চলছে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। আর এই সাফল্যে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি বড় অবদান আছে আরেক বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তা ও গবেষক জাকির হোসেন তপুর।
টাঙ্গাইলের তপু যুক্তরাষ্ট্রে ‘অল্টারনেটিভ মেডিসিন’ বিষয়ে পড়ালেখা করে দেশে ফেরেন এবং নানারকম প্রাকৃতিক ঔষধ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি শুরু করেন পাটপাতা নিয়ে তার গবেষণা।
এ ব্যাপারে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে তপু বলেন, “আমি ওষধি গাছগাছড়া নিয়ে গবেষণা করতেই অধিক আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু পাটপাতা থেকে তৈরি সবুজ চায়ের গুণাগুণ আমাকে আকৃষ্ট করে।”
সেখান থেকেই অরগানিক এই চায়ে প্রতি তপুর নিরন্তর আগ্রহ আর প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘মহিমা প্রোডাক্টস,’ যেখানে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে দেশে উৎপাদিত পাটের পাতা থেকে প্রস্তুত করা হয় চা।
অবশ্য বাংলাদেশে প্রথম এই চা প্রস্তুত করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ২০১৬ সালে। জার্মানির কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই দেশে এই উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ইতিবাচক ফলাফলও পাওয়া যায়।
পাটপাতা থেকে চা তৈরির প্রক্রিয়াটি সাধারণ চা পাতার মতোই সাধারণ। তোষা পাটের কচি পাতা ছড়িয়ে এনে রোদে শুকিয়ে তা মেশিনের মাধ্যমে গুড়ো করলেই হয়ে যায় পাটপাতার চা। পানিতে গরম দেয়ার পর এর রঙ হয় সবুজ।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ভেষজ গুণাবলিতে ভরপুর এই চায়ে পালং শাকের চেয়ে ৩০ শতাংশ অধিক ক্যালোরি আছে। তাছাড়াও এতে আছে ভিটামিন সি ও ডি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আয়রন সহ নানান খনিজ উপাদান।
তপুর মহিমা প্রোডাক্টসের পাটপাতার চা এখন ঢাকার মণিপুরীপাড়ার ‘জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রোমোশন সেন্টার’এ (জেপিডিসি) বিক্রি হয়। ৩০০ টাকা মূল্যের প্রতি প্যাকেটে থাকে ৩০টি টি-ব্যাগ। জেপিডিসির বিভিন্ন মেলায় স্টল দেয়ার মাধ্যমেও এই চায়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সাধারণ পাটপাতার চায়ের সাথে জেসমিন সহ আরো কয়েক প্রকারের ফ্লেভারের মিশ্রণে ভিন্ন স্বাদও আনা হয়েছে এতে।
কোষ্টকাঠিন্য দূর করা, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সহ বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে পাটপাতার চায়ের।
এদিকে পাটপাতার চায়ের রপ্তানি সম্ভাবনাও ব্যাপক। অর্গানিক চা হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই এর সুনাম ও চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ইংল্যান্ড, সুইডেন, ফ্রান্সের মতো দেশের বাজারে পাটপাতার চা রপ্তানি করা হয়।
যদিও ইউরোপীয় বাজারে আধিপত্য জার্মানির পাটপাতার চায়ের, তথাপি বাংলাদেশের উন্নতজাতের পাটের কল্যাণে শীঘ্রই এই বাজার বাংলাদেশি চা দখল করতে পারবে বলে আশা করা যায়।