ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের হামলায় সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের দুই ছাত্র আহত এবং ধাওয়ার সময় পালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহতের ঘটনার আদালতে হত্যা মামলা করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বুধবার দুপুরে নিহত সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি সাইফুজ্জামান মুরাদের বাবা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশোবাড়ে গ্রামের বাসিন্দা বদিউজ্জামান বিশ্বাস বাদী হয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলার আবেদন করেন।
বিচারক ফারুক আযম মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আদালতের নাজির সোহেল রানা জানান।
তিনি বলেন, মামলা নম্বর- জিআর ৬৮৫/২২। মামলায় ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানসহ ২০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শহরের পাগলাকানাই এলাকার ফেরদৌসের ছেলে ফাহিম হাসান সনি, সহসভাপতি তন্ময় চক্রবর্ত্তী, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পাগলাকানাই এলাকার ওয়াহিদুজ্জামান উজ্জলের ছেলে হাদিউজ্জামান আরিফ বিশ্বাস, গোয়ালবাড়িয়া কাস্টসাগরা গ্রামের আশরাফ ডাক্তারের ছেলে নিয়ন মিয়া, চুয়াডাঙ্গার কুলচারা গ্রামের উসমান গনির ছেলে মুস্তাকিম আহম্মেদ, বরিশালের বাবুগঞ্জ গ্রামের কাজী ফরহাদ হোসেন, রাজাপুর গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া, সদ্য বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক কাঞ্চনপুরের রবিউল ইসলাম রাব্বি, ধানহাড়িয়া গ্রামের আতা বিশ্বাসের ছেলে সাজেদুর রহমান সাজেদ, গোয়ালবাড়িয়া কাস্টসাগরা গ্রামের বাবলুর ছেলে আসাদ, ব্যাপারীপাড়ার ঝন্টু খোন্দকারের ছেলে তৌফিক, হলিধানী গ্রামের বেনু মিয়ার ছেলে ওলিউল্লাহ, কোরাপাড়ার বিটুল জোয়ারদারের ছেলে সংগ্রাম জোয়ারদার, নগরবাথানের ইউনুস আলীর ছেলে চুন্নু, পাগলাকানাই ব্যাকাব্রীজ এলাকার গোলাম সারোয়ারের ছেলে লালু, পাগলাকানাই এলাকার মতিয়ার পুলিশের ছেলে সঞ্জু, ব্যাপারীপাড়ার সাইদ ড্রাইভারের ছেলে মো. সাদী, জাড়গ্রামের ইকরামুল ইসলাম ও পাগলাকানাই এলাকার ইসলামের ছেলে মামুন।
আসামিরা সবাই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানের অনুসারী বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সাংগঠনিক দ্বন্দ্বের জেরে শুক্রবার বিকালে শহরের জোহান পার্কের সামনে ভেটেরিনারি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস সাজিদুল হাসান সজিব, নুর হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। এ সময় মোটরসাইকেলে পালাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খাম্বাবাহী ট্রাকে ধাক্কা লেগে নিহত হন ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী।
নিহতরা হলেন- সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশোবাড়ে গ্রামের বাদশা বিশ্বাসের ছেলে সাইফুজ্জামান মুরাদ, কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বরপুর গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে তৌহিদ হাসান এবং যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পাড়াদিয়া গ্রামের রাখাল চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ও ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষার্থী সমরেশ বিশ্বাস।
এ ঘটনায় আহত সাজিদুল হাসান সজিব ভেটেরিনারি কলেজের সাবেক ছাত্র ও জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহিম আহমেদকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে মামলা করেন।
এ মামলায় নয়ন মিয়া ও সংগ্রাম জোয়ার্দ্দার নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য রোববার জানায় পুলিশ।
এবার এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হলো।
হত্যা মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ডিভিএম ডিগ্রির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম হাসান সনির সঙ্গে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি সাইদুজ্জামান মুরাদ ও জিএস সজিবুল হাসানের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়।
বিষয়টি মীমাংসা করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাগর হোসেন সোহাগ ৭ অক্টোবর রাতে সবাইকে শহরে ডাকেন। সন্ধ্যার পর মুরাদ, সজিব, তৌহিদসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল করে শহরে বৈঠকে যোগ দেন।
ফিরে যাওয়ার সময় রাত ১০টায় নগরবাথান এলাকায় জোহান পার্কের সামনে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামি ইকরামুল ইসলাম ভিপি মুরাদ ও তার সহপাঠীদের চা পানের আহ্বান জানায়। সবাই মিলে চা পান করে। পরে সেখান থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তখন সজীব ও নুরুকে কুপিয়ে জখম করা হয়।
হামলা থেকে রক্ষা পেতে মুরাদ-তৌহিদ-সমরেশ একটি মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টা করেন। হামলাকারীরা তখন তাদের পেছনে ধাওয়া করে। এ সময় মুরাদদের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের খাম্বাবাহী ট্রাকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হন।
এ বিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরানের মোবাইলে কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।