জেলা পরিষদের নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে ইভিএমে ভোট চলছে দেশের ৫৭ জেলায়।
গাইবান্ধা উপ নির্বাচনের মতই সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকার নির্বাচন ভবনের মনিটরিং সেল থেকে সব জেলার ভোটের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, সোমবার সকাল ৯টায় নির্ধারিত সময়েই ৪৬২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, একটানা চলবে বেলা ২টা পর্যন্ত। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“কোথাও কোনো ধরনের সমস্যার কথা এখনও আমাদের কাছে নেই। দুয়েকটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা কার্যক্রম স্লো রয়েছে। আমরা কেন্দ্র থেকে পরিস্থিতি পযবেক্ষণ করছি।”
দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। পরে হাই কোর্টের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালীর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।
এছাড়া ভোলা ও ফেনীর সকল পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে সোমবার ভোট হচ্ছে ৫৭ জেলা পরিষদে।
এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন কেবল সংশ্লিষ্ট জেলার স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সে হিসেবে এ নির্বাচনে ভোটার কেবল ৬০ হাজার ৮৬৬ জন।
তারাই ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য মিলিয়ে ৬৭১ জন জনপ্রতিনিধি বাছাই করবেন। কেন্দ্রে যাওয়ার পর একজন ভোটারকে তিনটি আলাদা ব্যালটে ভোট দিতে হচ্ছে ইভিএমে।
স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোট হচ্ছে নির্দলীয় প্রতীকে। কোন এলাকার ভোটার কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন তা আগেই গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটার সংখ্যা ও সময় কম হলেও নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ-আনসার মিলিয়ে ৭ জনকে নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভোটররা মোবাইল নিয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার ছবিও তোলা যাবে না। প্রিসাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
একনজরে
ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ৬০ হাজার ৮৬৬ নির্বাচিত প্রতিনিধি ভোট দিচ্ছেন।
৪৬২ ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ৯২৫টি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি ভোটকেন্দ্র। প্রত্যেক কেন্দ্রে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা কক্ষ।
৫৭ জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, ৪৪৮ সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৬৬ সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী: চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন। সাধারণ সদস্য ১৪৮৫ জন। সংরক্ষিত সদস্য ৬০৩ জন।
চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন; সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৮ জন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক। আর তার সহকারী হিসেবে রয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। অন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের ভোটে জেলা প্রশাসককে পাল্টে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, সিসিটিভি ও ইভিএম যথাযথভাবে যাতে কাজ করে, সেজন্য ভোটকেন্দ্র ও উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার গাইবান্ধায় বর্তমান ইসির অধীনে প্রথম ভোটে সিসি ক্যামেরায় ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখে মাঝপথে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয় ইসি, যা নিয়ে নানামুখি আলোচনা তৈরি হয়।
জেলা পরিষদে ভোটের আগের দিন রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, “সিসিটিভির প্রচলনটা সাম্প্রতিক। আমরা এটার মাধ্যমে এখান থেকে নির্বাচন মনিটরিং করতে পারি। এটা একটা ভালো দিক।
“আমাদের তো কোনো পক্ষ নেই। আমরা চাই ভোটাররা যেন তাদের ভোটটা দিতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সিসি টিভির ব্যবহার করছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “আমাদের উপর কোনো চাপ নেই। আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। আমরা আমাদের কাজ করছি।”
নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাই জেলা পরিষদে নির্বাচিত হন, কারণ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির তালিকায় তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এবার কয়েকটি জেলায় জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীরাও ভোট করছেন।
জেলা পরিষদ বৃত্তান্ত
১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল; পরে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। এরপর ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অনির্বাচিত এই প্রশাসকদের মেয়াদ শেষে ২০১৬ সালে ভোট হয়।
জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে গত ৬ এপ্রিল ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২’ সংসদে পাস হয়। ১৩ এপ্রিল সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সর্বশেষ ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম জেলা পরিষদের ভোট হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে ২৩ অগাস্ট তফসিল ঘোষণা, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা; ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাই, ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ছিল।