Loading...
The Financial Express

জাবি সিন্ডিকেট: চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ আর শূন্য পদ নিয়ে

| Updated: January 06, 2023 20:24:25


জাবি সিন্ডিকেট: চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ আর শূন্য পদ নিয়ে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে না হওয়ায় ১৯টি পদের মধ্যে পদাধিকার বলে তিন সদস্যই কেবল নিয়মিত আছেন; বাকি ১৬ পদের অর্ধেক মেয়াদোত্তীর্ণ, অর্ধেক শূন্য।

শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ থেকে বিল পাস, যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য উপাচার্যকে এ সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিতে হয়। কোনো বৈঠকে ছয়জন সদস্য উপস্থিত থাকলেই উৎরে যাওয়া যায়। ফলে প্রশাসনিক কাজ অব্যাহত রাখতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২৩ (১) ধারা অনুযায়ী, সিন্ডিকেট এ শিক্ষায়তনের অন্যান্য সকল পর্ষদের অভিভাবকের ভূমিকাও পালন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন, ভর্তি পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিও অনুমোদন করে এই ফোরাম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী, মেয়াদ শেষে সিন্ডিকেট নির্বাচন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২২ (৩)-এ বলা হয়েছে, নির্বাচিত ও মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যরা দুই বছর মেয়াদের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ আট সদস্যের মধ্যে পাঁচজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের জুন মাসে, বাকি তিনজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে।

তবে মেয়াদ শেষে নির্বাচন না হলে সেখানে পুরনোদের দায়িত্ব পালনের কথাও বলা আছে অধ্যাদেশে। অভিযোগ রয়েছে, এ সুযোগ ব্যবহার করেই কর্তৃপক্ষ পর্যদকে নিজের মত করে চালায়, যাতে ‘আধিপত্য বজায় রাখা যায়’।

পদ খালি ও মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও কেন নির্বাচন হয় না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য (ডিন ক্যাটাগরি) ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ কামরুল আহছান অভিযোগের সুরে বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও সিন্ডিকেট নির্বাচন না দেওয়া বর্তমান গণতান্ত্রিক উপাচার্যের অগণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয়। নির্বাচন না দিলে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা থাকে না, লুটেপুটে খাওয়া যায়। যারা প্রশাসনে থাকে তারা অন্যায় করতে ভয় পায় না, অনেকটা ফ্যাসিস্ট আচরণ।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য (রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামিমা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা কর্তৃপক্ষের আসনে থাকেন, তারা চান সব পর্ষদগুলো নিজেদের মত করে চালাতে। এখানে বিশেষ সুবিধাভোগী কিছু লোক অবশ্যই আছে, এজন্য নির্বাচনগুলো ঠিক সময়ে হচ্ছে না।”

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে নির্বাচন শিগগিরই হবে বলে আমি আশাবাদী।“

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে তিনজন পদাধিকার বলে আসেন। তারা হলেন- উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও কোষাধ্যক্ষ। তারা নিয়মিত সদস্য। অধ্যাদেশে নিয়মিত সদস্য হিসেবে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদের কথাও বলা হয়েছে। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ না থাকায় সেটি খালি রয়েছে।

বাকি ১৫ জনের মধ্যে অধ্যাদেশের ২২ (১) ‘এফ’ বিধি অনুযায়ী, সিনেট সদস্যরা তাদের মধ্য থেকে দুজনকে সিন্ডিকেটে পাঠান। একই ধারার ‘আই’ বিধি অনুযায়ী, সিনেট সদস্যরা একজন বিশিষ্ট নাগরিককে সিন্ডিকেট সদস্যের জন্য মনোনীত করতে পারেন; যিনি সিনেট সদস্য নন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদমর্যাদার শিক্ষক প্রতিনিধি থাকেন ছয়জন। অধ্যাদেশের ২২ (২) বিধি অনুযায়ী, ডিন, প্রাধ্যক্ষ, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক সেই প্রতিনিধি হবেন।

এর মধ্যে শুধু অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন বর্তমানে সিন্ডিকেটে রয়েছেন। তার মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০১৮ সালের জুন মাসেই। বাকি পাঁচ পদমর্যাদার শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। কারণ অধ্যাদেশের ২২ (৩)-এ বলা হয়েছে, নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যরা যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিনেট সদস্য, কলেজের অধ্যক্ষ বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বহাল থাকবেন, ততক্ষণ তারা সিন্ডিকেট সদস্য থাকতে পারবেন। 

দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় পাঁচ পদমর্যাদার শিক্ষক পদোন্নতি ও সংশ্লিষ্ট পদ হারানোর কারণে সিন্ডিকেট থেকে বাদ পড়েছেন। 

অধ্যাদেশের ২২ (১) ‘ডি’ বিধি অনুযায়ী, সিন্ডিকেটে একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত সরকারি কলেজের দুজন অধ্যক্ষ সিন্ডিকেট সদস্য হয়ে থাকেন। এ দুজনের একটি পদ খালি, আরেকটি মেয়াদোত্তীর্ণ।

অধ্যাদেশের ২২ (১) ‘জি’ বিধি অনুযায়ী, আচার্য (রাষ্ট্রপতি) দুজন সদস্যকে মনোনীত করেন। এ দুজনের একটি পদ খালি, আরেকটি মেয়াদোত্তীর্ণ।

এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব পদমর্যাদার দুজনকে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামিমা সুলতানা বলেন, “সিনেটররা তিনজনকে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে মনোনীত করার এখতিয়ার রাখেন। বর্তমান সিনেট মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যদের মেয়াদ ২০১৬ সালেই শেষ হয়েছে। উপাচার্যকে সিনেটররা সব পর্ষদের নির্বাচনের জন্য বারবার অবহিত করেছে। কিন্তু তারা নির্বাচন দিচ্ছে না। যদিও বর্তমান উপাচার্য বলেছেন, সব পর্ষদেরই নির্বাচন দেবেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়।”

অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে সিন্ডিকেটে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছেন গণিত বিভাগের লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রত্যেকটা নির্বাচন সঠিক সময়ে হওয়া উচিত। সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচনে শুধুমাত্র অধ্যাপক না, শিক্ষকদের অন্যান্য ক্যাটাগরিতেও নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সহযোগী অধ্যাপক থেকে কোনও সিন্ডিকেট সদস্য নেই। অথচ এটি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির প্রতি অবজ্ঞা। বিধি অনুযায়ী, এ ধরনের নির্বাচনের পুরো এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের।”

কর্তৃপক্ষ নিজের ‘ইচ্ছামত নিয়োগ দেওয়াসহ’ অন্যান্য সব কাজ করার জন্য এ ধরনের গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে চায় না বলে মনে করেন বোরহান উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, অধ্যাদেশে দুই বছর পর পর সিন্ডিকেট নির্বাচনের কথা বলা আছে। আবার এও বলা আছে, নতুন কোনো সদস্য নির্বাচিত বা মনোনীত হয়ে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে না আসা পর্যন্ত আগে যিনি ছিলেন তিনিই সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে থাকবেন।

“বিশেষ কারণে দুই বছরের অধিক থাকতে পারে। নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতা বা যে কোনো সমস্যা হতেই পারে। সমস্যা হলে দুই বছরের অধিক সময় থাকাটা সবাই বিবেচনা করবে। কিন্তু ২০১৮ সালে মেয়াদ শেষ হয়েছে এখন ২০২৩; এত বছর আসলে সমস্যা থাকার কথা নয়। এটা সম্পূর্ণই সদিচ্ছার অভাব।“

বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্যসচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. নুরুল আলম নির্বাচিত উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ সব পর্ষদে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

“চলতি মাসের ২৫ তারিখ শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তনের আয়োজন চলছে।”

তিনি বলেন, “আমরা মার্চ মাসের শেষের দিকে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত উপাচার্য সব স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সচেষ্ট আছেন বলে মনে করি।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরই মধ্যে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের কাছে সিন্ডিকেটসহ সব ধরনের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন হবে বলে উপাচার্যও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

Share if you like

Filter By Topic