Loading...
The Financial Express

জগন্নাথ ভোজনালয় - একটি সম্পূর্ণ নিরামিষ হোটেল

| Updated: November 27, 2022 19:17:07


জগন্নাথ ভোজনালয় - একটি সম্পূর্ণ নিরামিষ হোটেল

পুরান ঢাকা নামটি শুনলেই সবার চোখে ভেসে ওঠে রসনাদার সব মোগলাই খাবার। রকমারি আমিষ খাবারের পীঠস্থান হলেও এই প্রাচীন ঢাকাতেই নিরামিষভোজীদের জন্য আছে আলাদা খাবারের দোকান। যেখানে রান্না করা সব খাবারই একদম বিশুদ্ধ নিরামিষ।

এখানে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি নিরামিষ হোটেল আছে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে স্বাদে-রসে জনপ্রিয় জগন্নাথ নিরামিষ ভজনালয়। যেন এক আদর্শ হিন্দু হোটেল। দূর-দূরান্ত হতে লোক ছুটে আসে, একবারটির জন্যে এই দোকানের অমৃতের আস্বাদ পেতে।

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকার সরু গলিটা ধরে এগোলেই চোখে পড়বে ১১০ নং বাড়ি। একটি ছোট্ট সাইনবোর্ড - লেখা জগন্নাথ ভজনালয়। ভেতরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেই দোতলায় ছোট ছিমছাম খাবারের হোটেল, খুব একটা জায়গার সংকুলান নেই, তবুও রোজ প্রচুর লোকের ভিড়। গেলেই দেখা যায় কিছু লোক দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় কখন খালি হবে আসন আর পাত পেড়ে শান্ত করা হবে পেটের আগুন।

দোকানের টেবিলগুলোতে সারি দিয়ে রেকাবি (ট্রে) সাজানো। রেকাবিতে ছোট ছোট স্টিলের বাটিতে করে রাখা নানা রকম নিরামিষ পদ - সুক্ত, ভাজি, বাটা, লাবড়া, রসা ,ডাল। যার যা লাগে সব যেন হাতের কাছেই, তুলে নিলেই হলো। গরম গরম ভাত শুধু আলাদা করে পরিবেশিত হয়।


দোকানটির বয়েস বিশ বৎসর। বর্তমানে পরিচালনায় আছেন অশোক কবিরাজ। পূর্বে ছিলেন নিতাই পাল। অশোক কবিরাজের নিজের পূর্বে একটি হোটেল ছিল। নিতাই পালের মৃত্যুর পরে তিনি এই দোকানটির ভার নেন। এখন একই সাথে চালাচ্ছেন জগন্নাথ ও গোপীনাথ ভজনালয় নামে দুটি হোটেল।

দোকান মালিক অশোক কবিরাজ          ছবি: শুভেচ্ছা বিশ্বাস 

ধর্ম-বর্ণে বেড়ায় না থেকে যেকোনো শ্রেণী পেশার মানুষই এখানে খেতে চলে আসেন। নেই কোনো আহামরি খরচাপাতি। ১৫টাকার ভর্তা, ২০ টাকার ডাল, ৪০ টাকার ছানা, পনির না হয় সয়াবিন। ভাত ২০ টাকা করে প্রতি প্লেট পরে আবার নিলে শুধু ৫ টাকা।

কখনো রয়ে যায় না খাবার, প্রতিদিন তাজা তাজা সদ্য পরিবেশনা। অশোক কবিরাজ বলেন, নিরামিষ খাবার দেখলে বোঝা যায়, সেটি আজকের নাকি কালকের। কারন পুরানো হলে সে খাবার কালো হয়ে যায়, সে আর লোককে পরিবেশন করা যায় না।

অশোক মহাশয় দোকানের পূর্বাবস্থায় স্মৃতি চারণ করেন।শুরুর সময় ছিল খুব দুর্দিন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। কষ্ট করে উঠতে হয়েছে।এখন রোজ কাস্টমারে ভরা। এখন স্টাফের সংখ্যা বিশজন। এরা কেউ রান্নার লোক, কেউ কুটনো কাটার, কেউ পরিবেশনার।

অশোক তার খাবারের হোটেল নিয়ে বেশ সুখী এখন। বলেন,"যেসব কাস্টমার আসেন, তাদের নিজেদের আচারও বেশ ভালো, খুব সাড়া পাই সবার কাছে।

আমরাও চেষ্টা করি তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করার।"

এখানে যে আলুসিদ্ধ দিয়ে খায়, সেও একে অমৃত মনে করে। আবার যে ছানা-পনিরে ভাত মাখছে তার কাছেও সেই স্বাদ একইরকম অমৃততুল্য।

দাম হাতের মুঠোয়। মাত্র ষাট হতে আশি টাকায় কোনো লোকের ভরপেটের খাওয়া হয়ে যেতে পারে। রোজ রোজ কুড়ি রকমের পদ। নানান পদের ডাল, ভর্তা আর শাক, ফুলকপির রসা, বড়ার রসা, ছানার রসা, পাঁচ তরকারি, এঁচোর, সরিষা ভেন্ডি, লাউ মুগ, কলার মোচা, কচু তরকারি আর চাটনি। সব রকম সবজির পূর্ণাঙ্গ পরিবেশনা।

আছে হোম ডেলিভারী সার্ভিস। কাছে পিঠে যারা থাকেন তারা ফুডপান্ডা, হাঙ্গরি নাকি আর পান্ডা গো তে এই সুবিধা পান। আর যে কেউ চাইলে তো পার্সেল নিতেই পারেন।

এমন লোকের ভিড় থাকে রোজ যে বসার মতো জায়গা দেয়া যায় না। সবচেয়ে ব্যস্ত প্রহর দুপুরে। ১টা থেকে ৪-৫ টা অব্দি এমনি থাকে। রাতে ব্যস্ততা কিছুটা কম। সকাল ৮টা হতে ১১টা অব্দি খোলা থাকে ভজনালয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাসে দুটো করে একাদশী নামক পর্ব থাকে, যেদিন অনেকেই গ্রহণ করেন না শস্য জাতীয় কোনো খাবার। সেদিনের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা আছে এই খানে। এছাড়া পূজার সময় এখানে হয় ভুনা খিচুড়ি, পোলাও, বুটের ডাল, লুচি আর সুস্বাদু পায়েস।

সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।


[email protected]

Share if you like

Filter By Topic