দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্ত জেলা চুয়াডাঙ্গা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে জেলার সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। পাশাপাশি কুয়াশার কারণে বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ রকিবুল হাসান জানান, শনিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে।
“সকাল থেকে ঘন কুয়াশা চারদিকে; আগের দুদিনও চুয়াডাঙ্গা কুয়াশায় ঢাকা ছিলো। তাপমাত্রা নিচে নেমে আসায় শীতে কাঁপছে মানুষ। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।”
চুয়াডাঙ্গায় সকাল থেকে পুরো জেলা ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে। বেলা বাড়লেও সূর্যের দেখা নেই; তার উপর হিমেল বাতাস থাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। গ্রামে কাজ না পেয়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে কাজের সন্ধানে শহরে আসছে হয়েছে নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ।
সকালে কৃষি শ্রমিকরা কাজের প্রয়োজনে তীব্র শীত উপেক্ষা করে মাঠে গেছেন। কুয়াশায় ভিজে থাকা ফসলের ক্ষেতে নেমে কাজ করেছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা কুয়াশার কবল থেকে বীজতলা রক্ষা করা জন্য জমে থাকা পানি সরিয়ে দিয়েছেন। তারপরও শীতে কৃষি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এরই মধ্যে অনেক স্থানে বীজতলা বিবর্ণ হওয়া শুরু হয়েছে। আলু ক্ষেতের পাতা কুকড়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। মুশুরি ছোলাসহ বিভিন্ন ফসলে শীত ও কুয়াশাজনিত রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। কৃষকরা ওষুধ ছিটিয়ে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কৃষক বজলু মিয়া বলেন, “কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্টে আছি।”
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, শীত-কুয়াশায় বীজতলায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাতে বীজতলা ঢেকে রাখতে পারলে ভাল। তা না হলে সকালে গিয়ে বীজতলায় আটকে থাকা পানি পাটকাঠি দিয়ে ফেলে দিতে হবে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। কেবিনসহ ২০টি বিছানার বিপরীতে শিশু ওয়ার্ডে রোগী অন্তত তিনগুণ বেমি। জায়গা না থাকায় অনেক রোগীকে বাইরে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
একই অবস্থা ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও। প্রতিদিন অন্তত ৪০ জন নতুন রোগী এ ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার রোগি চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের আশরায় আলী বলেন, “এই ওয়ার্ডে খুবই ভিড়; কোনো বেডও নাই। মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম বলেন, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। বয়স্করা শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। হাসপাতালে বিছানার তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন। বর্হিবিভাগেও রোগীর চাপ বেড়েছে।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক সপ্তাহ ধরে অন্য সময়ের চেয়ে রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। প্রতিদিন এ সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ জন। তাদের বেশীরভাই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।