প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে চীনে বিক্ষোভের ঘটনা খুবই বিরল। সেই বিরল কাজটিই করেছেন একজন মানুষ। তাকে দেখে বিশ্বজুড়ে সংহতি বিক্ষোভে উদ্বুদ্ধ হয়েছে অনেকেই। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির দলীয় সম্মেলন চলাকালে প্রেসিডেন্ট শি কে ‘স্বৈরশাসক’ তকমা দিয়ে রাজধানী বেইজিংয়ের একটি সেতুতে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারী ওই ব্যক্তি।
বেইজিংয়ের হাইদিয়ান জেলার সিটং সেতুতে গত বৃহস্পতিবারের এ ঘটনার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সেতুতে তার ব্যানার টাঙানোর ছবিগুলো দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে; আর তিনি পরিচিতি পান ‘সেতু মানব’ নামে।
তারপর থেকে একই ধরনের সংকেত এবং বার্তা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশের বেশ কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের কলবি কলেজের ক্যাম্পাসে হাতে লেখা একটি বার্তায় বেইজিংয়ের ওই সেতু মানবের প্রশংসা করে বলা হয়, ‘‘আমরা, চীনের মানুষরা এই বার্তাটি ছড়িয়ে দিতে চাই; যা কোনো ধরনের সেন্সরশিপ ছাড়াই আমাদের মনের কথা বলেছে।”
কেউ কেউ শি বিরোধী বার্তা যেমন: ‘আমার প্রেসিডেন্ট না’, ‘বিদায় জিনপিং’, ‘স্বৈরশাসক, জাতীয় বিশ্বাসঘাতককে সরিয়ে দিন’, ‘গ্রেট লিডারকে না বলুন, ভোটকে হ্যাঁ বলুন’, লেখা প্রদর্শন করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে অনেক চীনা মানবাধিকার কর্মী তাদের একাউন্ট থেকে ফলোয়ারদের ‘ধর্মঘটে’ যাওয়ার এবং কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন চলাকালে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড, এমোরি এবং পারসন্স স্কুল অব ডিজাইন, লন্ডনের গোল্ডস্মিথস এবং কিংস কলেজ এবং হংকংয়ের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেতু মানবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তার লেখা বার্তা ও প্রতীক প্রদর্শন করেছে।
যদিও কোথাও কোথাও প্রদর্শনের পরপরই সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও দ্রুত হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। বিক্ষোভ-প্রতিবাদের সব ছবি ও ভিডিও সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি দেশটির প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে ‘হাইদিয়ান’ ‘বেইজিং প্রতিবাদকারী’ ‘সিটং ব্রিজ’ কী ওয়ার্ডগুলোও মুছে দেয়া হয়েছে।
বিক্ষোভের ছবি শেয়ার করার কারণে কয়েকজন উইচ্যাট ব্যবহারকারীর একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
টুইটারে বিক্ষোভের ছবি শেয়ার করার কারণে চীনে একজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চীনের কেউ কেউ টুইটারে প্রবেশ করেন।
রহস্যে ঘেরা ওই ‘সেতু মানব’ কে বিখ্যাত ‘ট্যাঙ্ক মানব’ এর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।
তিয়ানআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভের সময় অজ্ঞাত এক চীনা ব্যক্তি একা খালি হাতে রাস্তায় চলন্ত ট্যাঙ্ক বহরের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। যে ছবি পরে নিপীড়ক শাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে জগৎবিখ্যাত হয়ে ওঠে।