সপ্তাহখানেক আগে ঢাকার চকবাজারে এক বৃদ্ধকে হত্যার পেছনে তার নাতি-নাতনিকে দায়ী করে পুলিশ বলছে, বন্ধুদের দিয়ে নানার `টাকা লুটের পরিকল্পনা’ করেছিলেন তারা; তাতে বাধা দেওয়ায় খুন হন সেই বৃদ্ধ।
ওই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
গত ১৭ নভেম্বর পুরান ঢাকার চকবাজার খাজে দেওয়ান রোডের একটি বাসা থেকে ৭৮ বছর বয়সী মনসুর আহমেদের ‘হাত-পা বাঁধা’ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় তদন্তে নেমে বকশিবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকে মঙ্গলবার রাতে মনসুরের নাতি-নাতনিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তারা হলেন, বৃদ্ধের নাতি শাহাদাত মুবিন আলভী (২০), নাতনি আনিকা তাবাসসুম (২৩), আনিকার বন্ধু রাজু (২২), রাজুর ছোট ভাই রায়হান (২০) এবং সাঈদ নামের আরেকজন। আনিকা একটি বেসরকারি ডেন্টাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং তার ভাই আলভী উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছেন।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বলেন, “নানার কাছ থেকে তারা বেড়াতে যাওয়ার জন্য টাকা পাবে না- সেই শঙ্কা থেকে টাকা লুটের চিন্তা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে আনিকার বন্ধু রাজুকে লুটের দায়িত্ব দেওয়া হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৭ নভেম্বর বাসার সবাই গিয়েছিলেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। মনসুর ছিলেন বাসায় একা। সেদিনই লুটের দিন ঠিক করে নাতি-নাতনিরা।
আনিকারা থাকেন বকশীবাজারে। ঘটনার সময় তিনিও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে পুরান ঢাকার চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে ছিলেন। তবে আগেই তিনি নানার ফ্ল্যাটের নকল চাবি বানিয়ে রাজুকে দেন। সঙ্গে দেন সিরিঞ্জ ভরা চেতনানাশক।
সবাই যখন কমিউনিটি সেন্টারে আনিকার ভাই আলভী আরও চারজনকে নিয়ে নানার বাসায় যান। তাদের বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি বাইরে পাহারায় ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, “বাসায় ঢোকার পর তারা মনসুরের হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং অচেতন করতে ইনজেকশন দেয়। তাদের বাধা দিলে বৃদ্ধ মনসুরে মাথায় আঘাত করে বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।”
ওই রাতে চাঁন কমিউনিটি সেন্টার থেকে ফিরে মনসুরকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফ্লোরে উপড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাসায় সিরিঞ্জ পাওয়ার পর সেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে প্রথমে রাজুকে শনাক্ত করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বলেন, “রাজু আনিকার বন্ধু। দুজনের যোগাযোগ ও মেসেঞ্জারে কথাবার্তা বিশ্লেষণ করে আনিকা, আলভী ও রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তাদের দেওয়া তথ্যে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনায় জড়িত আরেকজন পলাতক রয়েছেন।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন বলেন, স্থানীয় বাইতুন নূর জামে মসজিদের সভাপতি মনসুর আহমেদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। সেই মেয়ের ঘরের নাতি-নাতনি হলেন আনিকা-আলভী। তাদের বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন চিকিৎসক।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুই ভাই বোনের এমন পরিকল্পনা পরিবারের অন্য কেউ জানত না। পরীক্ষার পর বেড়াতে যাওয়ার টাকা সংগ্রহ করতে তারা এমন পরিকল্পনা করেছিলেন।
দুই ভাই-বোনক মাদকাসক্ত না বললেও রাজু ও অন্যদের মাদকাসক্ত বলছে পুলিশ। লুট হওয়া ৯২ হাজার টাকার মধ্যে আনিকাদের বকশীবাজারের বাসা থেকে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধারের কথা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।