খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক সংস্কার নিয়ে জিজ্ঞাসা আইএমএফের


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: October 31, 2022 12:48:03 | Updated: October 31, 2022 19:29:38


প্রতীকী ছবি

সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক যত এগোচ্ছে ততই ব্যাংকিং খাতের নানান বিষয় উঠে আসছে আলোচনার টেবিলে; যাতে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি, ব্যাংক খাতের সংস্কার, মুদ্রা বিনিময় হার পেয়েছে গুরুত্ব।

ঢাকা সফরকারী প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রোববার দ্বিতীয় দিনের একের পর বৈঠকে এসব বিষয়সহ ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় তুলেছেন। নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ তুলে ধরেছেন কর্মকর্তারা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দলটির জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে ব্যাংকারদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও তাদের অবহিত করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে নেওয়া উদ্যোগের কথা সভায় জানানো হয়। বিশেষ করে বিআরপিডি সার্কুলার-১৬ ও বড় শিল্প গ্রুপের বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপের কথা জানানো হয়।’’

এদিন প্রতিনিধি দলটি ব্যাংক খাত নিয়ে কাজ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের এমন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলা বেশিরভাগ বৈঠক অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনে।

অপরদিকে মুদ্রানীতি নিয়ে বৈঠকটি অনিুষ্ঠিত হয় গভর্নর ভবনে। এ বৈঠকে অনলাইনে আইমএফের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

এদিন আগের সূচি অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গেও বৈঠক করে প্রতিনিধি দলটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে মুদ্রানীতির প্রক্ষেপন, বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন ভারসাম্য, মূল্যস্ফীতির প্রক্ষেপন ও বাস্তবতা, খেলাপি ঋণ, বিনিময় হার, আর্থিক সংস্কার, জ্বালানির দর বাড়ায় অর্থনীতিতে প্রভাব, সুদহার নীতিমালা, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্বশাসন ও সুশাসনের মত বিষয়গুলো আলোচ্যসূচিতে ছিল।

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তৃতীয় দিনের আলোচনার পর প্রতিনিধি দলটি আবার ২ ও ৮ নভেম্বর বৈঠকে বসবে।

রোববারের বৈঠকের বড় অংশজুড়ে ছিল ব্যাংক খাতের উচ্চ হারের খেলাপি ঋণ। বকেয়া কিস্তি পরিশোধে একাধিকবার বড় ধরনের ছাড় এবং পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়ার পরও ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুন শেষে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের তিন মাসের চেয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়ে জুন শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। গত মার্চে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ হার ২০ শতাংশের উপরে। অথচ আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত হার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।

বৈঠকে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুর্নগঠন সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনার বিষয়ে এবং বড় শিল্প গ্রুপের বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপের কথা জানানো হয় আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।

বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান বিনিময় হার প্রসঙ্গে প্রতিনিধি দলকে ‘বর্তমান বিনিময় হার নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি সাময়িক’ বলে অবহিত করার জানিয়েছেন মুখপাত্র।

আবুল কালাম বলেন, “একটি অস্থিতিশীল সময়ে ডলারের দর র্নিধারণে কিছু গোষ্ঠীর কারণে ফটকাবাজি (স্পেকুলেশন) হয়। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হার নির্ধারণে একটি ইউনিফাইড ফর্মুলা নির্ধারণ করবে। বিনিময় হার নির্ধারণের এই ব্যবধানও কমে আসবে তখন বলে আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।’’

ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ, বাংলাদেশের আমদানির চেয়ে রপ্তানি ও রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটাতি বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার।

বৈঠকে ব্যাংকিং পরিচালনায় ব্যাংকারদের শাস্তি দেওয়া ও জরিমানার এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে কি না সেটিও আলোচনায় আসে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই জিজ্ঞাসা ছিল।

এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখাপাত্র জানান, সরকারি ব্যাংকের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি প্রতিনিধি দলকে সভায় জানানো হয়। আর ব্যাংক কোম্পানি আইনে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাস্তি ও জরিমানা করতে পারে।

এদিকে বছরে একবারের বদলে আইএমএফ প্রতিনিধি দল ত্রৈমাসিক আকারে মুদ্রানীতি প্রণয়নের পদক্ষেপ নিতে আলোচনা করে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মত বছরে দুবার প্রণয়নের কথা বলা হলে তারা দ্বিমত করেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৬ সাল থেকে অর্থব্ছরে দুবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করত। পরে ২০১৯ সাল থেকে অর্থবছরে একবার মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হচ্ছে।

Share if you like