ভবিষ্যতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মত কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, দুর্যোগ মোকাবেলায় তারা ‘দয়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি’। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, তখনকার সরকার এই ব্যাপারে একেবারেই সচেতন ছিল না। কোনো সতর্কতাও অবলম্বন করেনি।
“আবার ওই রকম (খালেদা জিয়া) কেউ যাতে ক্ষমতায় না আসে, যিনি কোনো দুর্যোগের পরে বলবে ‘যত মানুষ মারা যাওয়ার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই’। এই ধরনের কথা বলে কেউ যেন দায় দায়িত্বহীনতার পরিচয় না দেয়, সে বিষয়ে ভবিষ্যতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।“
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৯১ সালের ওই ঘূর্ণিঝড়ের পর তার দলের কর্মীরাই সবার আগে মানুষের পাশে ছুটে গিয়েছিল।
“নৌ এবং বিমান বাহিনীও কিন্তু সতর্ক ছিল না। বিমান বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নৌ বাহিনীর জাহাজগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর হাজার হাজার মানুষ ভেসে যায়। আমরা ওই সমস্ত এলাকা ঘুরে যখন পার্লামেন্টে গিয়ে যখন বিষয়গুলো বললাম, মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানালাম, তখন বিএনপি সরকার এ ব্যাপারে কোনো হিসাব দিতে পারল না।
“বরং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে সোজা বলে দিলেন ‘যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই’। আমি বিরোধী দলের নেতা, আমি উঠে জিজ্ঞেস করলাম কত মানুষ মারা গেলে আপনার তত মানুষ হবে? আপনি কি সংখ্যাটা বলবেন?”
সেই ঘূর্ণিঝড়ে কত মানুষ মারা গিয়েছিল, তখনকার বিএনপি সরকার সেই সংখ্যা ‘ঢাকতে চেষ্টা করছিল’ বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তার সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ‘দুর্যোগ মোকবিলায় সক্ষম দেশ’ হিসেবে পৃথিবীতে স্থান করে নিয়েছে।
“এটা আমরা প্রমাণ করেছি। কিন্তু এটা অব্যাহত রাখতে হবে,” বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জলাবায়ু পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা নগণ্য হলেও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
“তারপরও আমি বলব, প্যারিস চুক্তি হওয়ার ফলে একটা আশার প্রদীপ জ্বলে আছে, পাশপাশি গ্লাসগোতেও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে কি হয়…।
“কিন্তু আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে আমাদের ব্যবস্থাটা আমাদের নিজেদেরই করে নিতে হবে।”
সবাইকে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “বৃক্ষরোপণ, সবুজায়ন বা উপকূলীয় অঞ্চল যত বেশি আপনারা বৃক্ষ আচ্ছাদিত করতে পারবেন, তত বেশি কিন্তু আমরা আমাদের দেশকে বাঁচাতে পারব।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এবং পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বহু ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “বাঙালি জাতিকে কেউ আর দাবায়ে রাখতে পারবে না। প্রাকৃতিক, মনুষ্য সৃষ্ট সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাবে।”
এ অনুষ্ঠানে ৫০টি মুজিব কিল্লা, ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং ২৫টি জেলা ত্রাণগুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানও বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।