মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা না মানায় ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিল করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বুধবার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব মাহবুবা বিলকিস স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আদেশে নীতিমালা অনুসরণ না করার পাশাপাশি ‘মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ পরিচালনায় অপারগতা স্বীকার করায়’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতা ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি। বর্তমানে এ কলেজে বিভিন্ন বর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন।
তারা গত অগাস্টে বিএমডিসি’র অনুমোদন না থাকা এবং একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল।
শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলনের সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. একেএম আহসান হাবিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, কেয়ার মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজে ‘মাইগ্রেট’ করতে পারবেন।
এর আগে দু্টি মেডিকেল বন্ধের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “তাদের অনুমোদন নাই এটা ঠিক, কিন্তু যে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হল, তাদের কোনোকিছু না জেনে ভর্তি হওয়াটাও ঠিক হয়নি। আমরা এর আগে দুটি মেডিকেল বন্ধ করে দিয়েছি। সেখানকার শিক্ষার্থীদের অন্য মেডিকেল কলেজের অধীনে মাইগ্রেট করিয়ে।“
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর আগেও কলেজটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা মেনে না চলায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কলেজটির একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল; যা নিয়ে পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে গিয়েছিল।
বুধবার কেয়ার মেডিকেল কলেজ বন্ধের আদেশের অনুলিপি কেয়ার মেডিকেল কলেজের পরিচালনা পর্যদের চেয়ানম্যানকে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা না মানায় ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেয়ার মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়। তবে উচ্চ আদালতে রিট করে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই রিট পিটিশনটি গত ২৭ জুলাই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
অপরদিকে অনুমোদন স্থগিতাদেশের পর গত পাঁচ বছরে কর্তৃপক্ষ কলেজটির মানোন্নয়ন করতে পারেনি। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ জানিয়েছে, “গত ১৪ জুন একটি কমিটি কেয়ার মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে। এসময় সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ না থাকা, শিক্ষকের ঘাটতি, বিদ্যমান হাসপাতাল ও কলেজের নামে নিজস্ব জমি না থাকা, কলেজ ও হাসপাতাল একই ক্যাম্পাসে না থাকা, হাসপাতালের শয্যা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রোগী না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে।“
এরপর গত ২৩ অক্টোবর স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। সেখানে এসব ঘাটতির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। ওই বৈঠকে কলেজের অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ অনুযায়ী স্থগিতাদেশকৃত কেয়ার মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিল করা হল।’
২০১৩ সালে কেয়ার মেডিকেল কলেজ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পায়। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নবায়ন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুমোদন দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজটি।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১১ এর বাস্তবায়নের শর্ত পূরণ না হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কেয়ার মেডিকেল কলেজে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাই কোর্টে রিট আবেদন করে। এতে সাময়িক বন্ধের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।
এর ভিত্তিতে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এইসব শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে এমবিবিএস কোর্সে পড়াশুনা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন না পাওয়া ও তালিকাভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ করতে পারছেন না।
গত ২৫ অগাস্ট আন্দোলন চলাকালে কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী সিলভিয়া মিম ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কেয়ার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন। এছাড়া প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়েছে তাকে।