আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের রোমাঞ্চকর ফাইনাল দিয়ে পর্দা নেমেছে কাতার বিশ্বকাপের। আগের আসরের চ্যাম্পিয়নদের টাইব্রেকারে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এই ফুটবল মহাতারকা ছাড়াও আসরে আলো ছড়িয়েছেন আরও অনেকে। গড়েছেন নতুন নতুন কীর্তি।
এই বিশ্বকাপে হওয়া ব্যক্তিগত রেকর্ডগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
লিওনেল মেসি: ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর পথে লিওনেল মেসি গড়েছেন বেশ কয়েকটি রেকর্ড। বিশ্ব সেরার মঞ্চে রেকর্ড ২ হাজার ৩১৪ মিনিট খেলেছেন মেসি। ফরাসিদের বিপক্ষে ফাইনালে তিনি ভেঙেছেন ইতালির গ্রেট পাওলো মালদিনির ২ হাজার ২১৭ মিনিট খেলার আগের রেকর্ড। আসরে ৭ গোল করার পথে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে গেছেন মেসি, ১৩ গোল নিয়ে। তালিকায় তার পরে আছেন গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (১০), মারাদোনা (৮), গিয়ের্মো স্তাবিল (৮), মারিও কেম্পেস (৬) ও গনসালো হিগুয়াইন (৫)।
প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গোল করেছেন মেসি। নকআউট পর্বে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের রেকর্ডে পেলের পাশে বসেছেন তিনি, দুজনেরই ৬টি করে অ্যাসিস্ট।
কিলিয়ান এমবাপে: সাত ম্যাচে ৮ গোল করে এবারের আসরের গোল্ডেন বুট জিতেছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড, যা ২০০২ বিশ্বকাপের পর এক আসরে ব্যক্তিগত গোলের ক্ষেত্রে যৌথভাবে সেরা। ২০ বছর আগের ওই আসরে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়েছিলেন সাবেক ব্রাজিল স্ট্রাইকার ‘দা ফেনোমেনোন’ রোনালদো। এরপর গত চারটি বিশ্বকাপে কেউই পাঁচটির বেশি গোল করতে পারেননি।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেন ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার। তার আগে বিশ্ব সেরার মঞ্চের ফাইনালে সবশেষ হ্যাটট্রিক করেছিলেন ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের জো হার্স্ট।
২০১৮ বিশ্বকাপে ফাইনালে জালের দেখা পাওয়া এমবাপে কাতারের ফাইনালেও গোল করে ইতিহাসের পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে দুটি ভিন্ন ফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়েছেন। এই দুই ফাইনালে চার গোল করেছেন এমবাপে, বিশ্ব সেরার মঞ্চে ফাইনালে এককভাবে এটিই এখন সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
লিওনেল স্কালোনি: ৪৪ বছর বয়সে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতলেন আর্জেন্টিনার লিওনেল স্কালোনি। ১৯৭৮ সালে ৩৯ বছর বয়সে কোচ হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তার স্বদেশি লুইস মোনোত্তি।
ইয়াসিন বোনো: প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসেবে মরক্কোর সেমি-ফাইনাল খেলার পথচলায় দারুণ কীর্তি গড়েন গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। এই মহাদেশের প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে তিনটি ম্যাচে জাল অক্ষত রাখেন তিনি।
অলিভিয়ে জিরুদ: চোটের কারণে শেষ মুহূর্তে তারকা ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ায় ফ্রান্সের শুরুর একাদশে নিয়মিত হন অলিভিয়ে জিরুদ। সুযোগ লুফে নিয়ে আসরে চার গোল করেন এই অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার। এর মাধ্যমে থিয়েরি অঁরিকে (৫১ গোল) পেছনে ফেলে দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হন ৩৬ বছর বয়সী জিরুদ (৫৩ গোল)।
নেইমার: ব্রাজিলের মতো বিশ্বকাপটা ভালো যায়নি নেইমারেরও। চোটের কারণে গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচ মিস করা এই তারকা ফরোয়ার্ড আসরে দুটি গোল করেন। এতেই অবশ্য ভাগ বসান কিংবদন্তি পেলের ব্রাজিলের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডে। দুজনই সমান সংখ্যক ৭৭টি গোল করেছেন।
উগো লরিস: সাবেক ডিফেন্ডার লিলিয়ান থুরামকে (১৪২ ম্যাচ) পেছনে ফেলে ফ্রান্সের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়েন উগো লরিস, তার ম্যাচ সংখ্যা ১৪৫টি। প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে ২০টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
হ্যারি কেইন: ফ্রান্সের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের শেষ আটে ২-১ ব্যবধানে হারের ম্যাচে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেন হ্যারি কেইন। এতে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হয়ে তার গোল হয় ৫৩টি। পাশে বসেন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় ওয়েইন রুনির। ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২০ ম্যাচ খেলে ৫৩ গোল করেছিলেন রুনি। পূর্বসূরিকে কেইন ছুঁয়ে ফেলেন ৮০ ম্যাচ খেলে।
ইভান পেরিসিচ: আসরে নিজে একটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থকে দিয়ে দুটি গোল করান ক্রোয়েশিয়ার অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড ইভান পেরিসিচ। সবশেষ তিন বিশ্বকাপে ছয় গোলের সঙ্গে তার নামের পাশে পাঁচটি অ্যাসিস্টও রয়েছে। এই সময়ে সরাসরি গোলে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তার চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল লিওনেল মেসি (২১টি)।
গনসালো রামোস: পর্তুগালের তরুণ এই ফরোয়ার্ড বিশ্বকাপে শুরুর একাদশে প্রথমবারের মতো নামেন কোয়ার্টার-ফাইনালে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। দলের ৬-১ গোলে তিনি অবদান রাখেন দারুণ এক হ্যাটট্রিকে। ২০০২ সালে জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমেই হ্যাটট্রিক করেন তিনি। গনসালো রামোসের হ্যাটট্রিক ৩২ বছর পর বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের প্রথম। সবশেষ ১৯৯০ আসরে শেষ ষোলোয় কোস্টা রিকার জালে তিনবার বল পাঠিয়েছিলেন চেকোস্লোভাকিয়ার স্কুরাভি।