রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকেট কালোবাজারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্টেশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানালেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তারা হলেন- মো. আব্দুল হাকিম (৩৭), মো. জয়নাল আবেদীন (৫৯), মো. শামীম ওরফে সম্রাট (২৭), মো. আব্দুল জলিল (১৯), মো. খোকন মিয়া (৫৫) ও মো. উজ্জল ভূইয়া (৩৩)। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শুক্রবার র্যাবের টিকাটুলি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল আরিফ বলেন, চক্রটির ‘হোতা’ আব্দুল হাকিম ও অন্যরা স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন এনআইডি ব্যবহার করে টিকেট সংগ্রহ করেন। এছাড়া অনলাইনেও তারা বিভিন্ন পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টিকেট সংগ্রহ করেন।
“এমনকি অনেক সময় তারা রিকশাওয়ালা, কুলি, দিনমজুর- এদেরকে অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে।”
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এক একটি ট্রেন ছাড়ার তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে বেশি দামে বিক্রির তৎপরতা শুরু করত দলটি।তাদের নেতৃত্বে থাকত আব্দুল হাকিম।
“ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে তাদের মজুদ করা কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারণত দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে।”
তবে সুযোগ ও সময় বুঝে অনেকক্ষেত্রে তা আরও বেশি দামে বিক্রি করা হয় বলে জানান কর্নেল আরিফ।
তিনি বলেন, চক্রটির আরও সদস্য ও ইউনিট রয়েছে; প্রতিটি ইউনিটে পাঁচ থেকে সাতজন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব অধিনায়ক বলেন, আব্দুল হাকিমের বাড়ি কিশোরগঞ্জে; বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে এবং স্টেশনে কর্মরত অসাধু একটি চক্রের যোগসাজশে ২০১৮ সাল থেকে কালোবাজারি শুরু করে সে।
“বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও সে কখনও ধরা পড়েনি। সে অত্যন্ত সুকৌশলে তার কর্মীদের দিয়ে দীর্ঘদিন টিকেট চোরাকারবার চালিয়ে আসছিল।”
কমলাপুর স্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলাতেও তারা এ কার্যক্রম চালিয়ে থাকে বলে র্যাবের ভাষ্য।
তিনি বলেন, মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ স্টেশনে ও বাকি টিকেট অনলাইনে বিক্রি হয়। ফলে কাউন্টারে গিয়ে অনেকে টিকেট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগ গ্রহণ করে চক্রের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈদুল আজহার আগে কালোবাজারি চক্রের ছয়জন এবং গত ২০ অক্টোবর আরও পাঁচজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের বরাতে র্যাব জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাকিমের ‘ক্লায়েন্ট’ রয়েছে। তাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে বেশি এমনকি কখনও দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা করে তারা।
এভাবে পাঁচবছরে হাকিম সারাদেশে ‘শক্তিশালী নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেন র্যাব অধিনায়ক।
তিনি বলেন, টিকেট কালোবাজারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে খোকন মিয়ার নামে পাঁচটি মামলা রয়েছে। গত ২০ অক্টোবর র্যাব তাকে গ্রেপ্তারও করেছিল। সে সময় ৩২ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও একই কাজ শুরু করে।
এছাড়া গ্রেপ্তার শামীমের বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খেটেছে শামীম।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে ২১টি টিকেট পাওয়া গেছে; এছাড়া টিকেট বিক্রির ৯ হাজার ৮১৮ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান কর্নেল আরিফ।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।