Loading...
The Financial Express

এমন ভাগ্য নিয়ে জন্মাইনি যে বাংলাদেশে মরব: কবীর সুমন

| Updated: October 16, 2022 10:29:00


ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ভেন্যু নিয়ে অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে অবশেষে মঞ্চে এসে এক ঘণ্টা সুর আর কথার মায়ায় বাঁধলেন কবীর সুমন; এরপর হঠাৎই অসুস্থবোধ করলে একটু বিরতি নেন তিনি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

ওই সময় ইনহেলার হাতে নিয়েই ভারতের বাংলা গানের জনপ্রিয় এই শিল্পী কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনে বলে ওঠেন, “আমি এমন ভাগ্য নিয়ে জন্মাইনি যে বাংলাদেশে মরব।”

সাময়িক এ খারাপ লাগা কেটে গেলে ১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে আবার গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। গানের মাঝে মাঝে গল্প মাতিয়ে রাখেন দর্শকদের।

শনিবার বিকালে পরিবর্তিত ভেন্যু ঢাকার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে ‘সুমনের গানের’ অনুষ্ঠানটি শুরুর আগেই তার ভক্তরা হাজির মিলনায়তনে।

বিখ্যাত অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’ এর তিন দশক পূর্তিতে ঢাকায় ‘সুমনের গান’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পিপহোল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। প্রথম জাতীয় যাদুঘরের মিলনায়তনে হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় ভেন্যু বদলে যায়।

তিন দিনের এ আয়োজনে গান গাইতে বৃহস্পতিবার সকালেই ঢাকা পৌঁছেন ভারতের বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী সুমন। এবারের আয়োজনে দুইদিন আধুনিক গান এবং একদিন বাংলা খেয়াল গাইবেন তিনি।

কবীর সুমন মঞ্চে উঠলেন প্রায় সাড়ে পাঁচটায়। প্রথম দিনের আয়োজনে মিলনায়তন তখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ। দাঁড়িয়ে দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন। তুমুল করতালির মধ্যে বসলেন তার আসনে।

ফুরফুরে মেজাজে নিজের গান ও বাংলাদেশ নিয়ে বললেন তার অনুভূতির কথা। বললেন গান নিয়ে তার দীর্ঘ ভ্রমণের কথাও। পুরোটা সময় উপস্থিত দর্শক তন্ময় হয়ে শুনছিলেন তার কথা।

গান দিয়েই নিস্তব্ধতা ভাঙলেন ভারতীয় আধুনিক বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী। 'একেকটা দিন মসৃণ, ভোর থেকে শুরু করে রাতের শয্যায়...' দিয়ে শুরু করলেন।

নিজে গাইলেন, দর্শকদের দিয়ে গাওয়ালেন 'পুরানো সেই দিনের কথা', 'হাল ছেড়ো না বন্ধু তুমি', 'বাংলার ধনুকের ছিলায় ছিলায় যত টান', 'সবুজ দ্বীপের মতো মাঝখানে সুফিয়া কামাল,' ' ও গানওয়ালা... আরেকটা গান গাও...'।

গানের মাঝে মাঝে হাস্যরস ছড়ানো গল্পে মাতিয়ে রাখলেন দর্শকদের। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও জমালেন আড্ডা। মজার গল্পে হাসিতে যোগ দিলেন দর্শক।

এসময় দুটো বড় রোগের আক্রমণে বিপর্যস্ত হওয়ার কথা জানালেন।

“আগে গিটার বাজিয়ে গান করতাম। একটা রোগের আক্রমণে হাতের আঙুলে সমস্যা দেখা দিল। গিটার বাজিয়ে গান করতে পারি না। তবে আপনাদের ভয় নেই। কিবোর্ড বাজিয়ে গাইতে পারব,” বলেন তিনি।

গানের মাঝে মাঝে গল্প বলছিলেন। প্রয়াত কবি শহীদ কাদরীর 'তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা' কবিতা অবলম্বনে লেখা গান গাওয়ার আগে বলেন, "আমার বন্ধু শহীদ কাদরীর অসম্ভব সুন্দর কবিতা লিখত। একদিন ভাবলাম চমকে দেই। কবিতাটি গান করে কাদরীকে শোনালাম। চুপচাপ শুনল। এরপর বলল, “এটা নিয়ে গানও হতে পারে?"

সুমন বলেন, "আপনারা শহীদ কাদরীর কবিতা পড়বেন। ওর কবিতা পড়লে কবিতা পড়ার 'বদ অভ্যাস' হয়ে যায়।

"এক সময় কথায় কথায় কেঁদে ফেলতাম। এখন কাঁদতে ইচ্ছে করে আবার চেপে যেতেও ইচ্ছে করে। ইতালির সাহিত্যিক ইতালো কানভিনো বলেছেন, একটা পর্যায়ে মানুষ বেঁচে থাকে। তার চারপাশটা মৃত হয়ে যায়। আমার বাবা-মা, ওস্তাদ সবাই মারা গেছেন। আজ মনে হচ্ছে তারা যদি আজকের এই দৃশ্যটা দেখতে পেতেন?"

আবেগ ভরা কণ্ঠে তিনি বলে চলেন, "আপনারা এত সুন্দর করে আমার সাথে গাইছেন অবাক লাগছে। পরিচিত গানগুলো সবাই গায়। কিন্তু যখন 'কন্ঠে নিলেম গান, আমার শেষ পারানির কড়ি'র মত এত অপরিচিত গান যখন কলকাতায়ও গাই, সবাই চুপ করে থাকে। আপনারা গাইলেন। আপনারা গান খান, গান যাপন করেন।"

নিজেকে নিয়ে রসিকতা করে সুমন বলেন, " আমি বুড়ো হয়েছি; কিন্তু বড় হইনি। বড় হলে কেউ পাঁচবার বিয়ে করে? মানুষ একবার দুইবার করে। তাই বলে পাঁচবার? কতটা আহম্মক আমি, প্রেমে পড়ছি তো পড়ছিই। প্রেমে পড়ছি ঠিক আছে, তাই বলে বিয়ে করতে হবে? করছি তো করছি। প্রতিনিয়ত প্রেমে পড়ছি।"

সবশেষে তিনি বলেন, "এই কথাটা আমি বাংলাদেশকে বলছি। আমার সময় ফুরিয়ে আসছে। আমি আর একবার বাংলাদেশে আসতে চাই। সে অনুষ্ঠানে বলতে চাই, “কোন সুরগুলো কোন গানগুলো আমায় পুষ্ট করল? সেই স্মৃতির কথা বলব।

"আমি আরেকবার বাংলাদেশে আসব। তবে সেবার কোনো টাকা নেব না। দায় থেকে গাইব। আমার গান শোনানোর দায়।"

'বিদায় পরিচিতা, আমি একা তুমি একাই...' যখন গাইছিলেন নিস্তব্ধতা কাটিয়ে দর্শক সাড়িতে বসা কারও কান্নার আওয়াজও যেন শোনা যাচ্ছিল।

 

Share if you like

Filter By Topic