স্বাধীন সংস্থা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব সরকারের কাছে নেওয়ার যৌক্তিকতা সংসদে তুলে ধরলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে তিনি নানা যুক্তি ও উদাহরণ দিয়ে বলেন, এটি নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকা উচিৎ।
বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) তৈরি করা হয়। তখন থেকে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাংবিধানিক সংস্থা ইসি। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিও পায়।
পরে স্মার্ট এনআইডিও ইসির ব্যবস্থাপনায়ই হয়। এখন নানা ধরনের সেবা পেতে নাগরিকদের এনআইডি প্রয়োজন হয়।
বছর খানেক আগে সরকার এনআইডি কার্যক্রম ইসির হাত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনে নতুন আইনও হচ্ছে।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিল। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি সেভাবে বিরোধিতা না করলেও ইসি কর্মকর্তাদের আপত্তি রয়ে গেছে।
এর মধ্যেই সংসদে গণফোরামের নেতা মোকাব্বির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন- হঠাৎ করে সরকার জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা চালানোর কারণ কী? এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব সংসদে টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির ইতিহাস তুলে ধরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ২০০৭ সালে একটি ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির জন্য সেনাবাহিনীর অধীনে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের ‘বাইপ্রোডাক্ট’ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রমটি শুরু হয়। এটি ছিল ‘সাময়িক পদক্ষেপ’।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রমের ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম শুধু ভোটার বা ১৮ বছরের বেশি নাগরিকের জন্য নয়, বরং সকল নাগরিকের জন্য প্রাসঙ্গিক। এছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলা, চাকরির আবেদন, ইউটিলিটি সংযোগ, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীন বিভিন্ন ভাতার আবেদন, খাস জমি প্রাপ্তির আবেদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনআইডি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
“এর মধ্যে ভোটার হওয়ার বিষয় মাত্র একটি। অন্যান্য ক্ষেত্রে এনআইডি ব্যবহারের বিষয়ে ইসির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নির্বাহী বিভাগের অধীনে হয়ে থাকে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এ বিবেচনায় ও বাস্তবতার নিরিখে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি নির্বাহী বিভাগের অধীনে হওয়া উচিৎ এবং এ কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
নজরদারিতে প্রযুক্তি
রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কাজ ঠেকানোর লক্ষ্যে সোশাল মিডিয়ায় নজরদারি চালাতে সরকার আধুনিক প্রযুক্তি কিনেছে বলে সংসদে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।
তিনি বলেন, “ইন্টারনেটে সোশাল মিডিয়ায় দেশ ও সরকারবিরোধী কার্যক্রম রহিতকল্পে এনটিএমসিতে (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) Open Source Intelligence Technology (OSINT) এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে এবং একটি Integrated Lawful Interception System (ILIS) চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে দৃঢ় অবস্থান ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়ছে।
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, বলেন তিনি।
মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাসহ চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধ করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংসদে জানান, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে বর্তমানে ১৪ জন কূটনীতিক চুক্তিভিত্তিক কর্মরত আছেন।
এর মধ্যে ১০ জন রাষ্ট্রদূত, ২ জন মিনিস্টার, ১ জন কাউন্সেলর এবং ১ জন তৃতীয় সচিব হিসেবে কর্মরত।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা ১০ জন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার হলেন মরক্কোতে মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, রাশিয়ায় কামরুল আহসান, কানাডায় মো. খলিলুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে মোহাম্মদ ইমরান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এম আবু জাফর, জাপানে শাহবুদ্দিন আহমেদ, জার্মানিতে মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ইরাকে মো. ফজলুল বারী, সৌদি আরবে মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এবং ভূটানে শিব নাথ রায়।
চারটি দেশে সশস্ত্র বাহিনী হতে প্রেষণে রাষ্ট্রদূত রয়েছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। তারা হলেন- লেবাননে মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান, কুয়েতে মেজর জেনারেল মো. আশিকুজ্জামান, মালদ্বীপে রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ এবং ইন্দোনেশিয়ায় এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিশ্বের ৬০টি দেশে বাংলাদেশের ৮১টি মিশনের মধ্যে বর্তমানে ১৭টিতে বাংলাদেশের মালিকানাধীন নিজস্ব চ্যান্সারি ভবন এবং ১৪টি মিশনে নিজস্ব মালিকানাধীন রাষ্ট্রদূতের বাসভবন রয়েছে। এছাড়া ৫টি মিশনে বাংলাদেশের মালিকানাধীন জমি রয়েছে।
বর্তমানে ৭টি মিশনে বাংলাদেশের মালিকানাধীন নিজস্ব জমিতে ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবন নির্মাণে প্রকল্প চলছে বলেও জানান তিনি।
মোমেন জানান, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৫ হাজার কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কোভিড মহামারীর সময়ে ৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী স্থায়ীভাবে দেশে ফেরত আসেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।