ছবিটি আজ হতে ১৩৭ বছর আগে ১৮৮৫ সালের ১০ অক্টোবর তোলা, সুদূর আমেরিকার পেনসালভেনিয়া নামক একটি অঙ্গরাজ্যের মহিলা চিকিৎসা বিদ্যায়তনে। ছবিতে যেই তিনজন বিদূষীকে দেখা যাচ্ছে তারা প্রত্যেকেই এশিয়ার কন্যা। এই তিন কন্যা হলেন ভারতের আনন্দী গোপাল বাঈ যোশী, জাপানের কেই ওকামি এবং সিরিয়ার সাবাত ইস্লামবুলি।
আনন্দীগোপাল বাঈ যোশী
বালিকা বয়েসে ব্রাক্ষণ কন্যা যমুনার বিয়ে হয় সরকারি কেরানি গোপাল রাওয়ের সাথে। বিয়ের পরে স্বামী ভালোবেসে আদুরে নাম দেন আনন্দী। সংসারে সকল ব্যবস্থার মাঝেও রাতে হারিকেনের আলোতে গোপালের কাছে তার পাঠ চলত ভালোই। গোপাল কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে গৃহিনীকে পড়াশুনা শিখতে উৎসাহ দিতেন।
বছর চোদ্দতেই আনন্দী গর্ভলাভ করে। জন্ম দেয় এক পুত্র সন্তানের, কিন্তু সে দশ দিনের মাথায় আর প্রাণে বেঁচে ফেরেনি উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে। জীবনের মোড় ঘুরে যায়, আনন্দী বাঈ ঠিক করেন তিনি ডাক্তারি শিখবেন। পাশে পান স্বামীকে।
প্রথমে পাড়ি জমান কলকাতায়। সেখানে একটি বিদ্যালয়ে আনন্দী ইংরেজি ভাষার পাঠ নেন। তারপর কলকাতা হতে আনন্দীর জাহাজ ভেরে নিউ ইয়র্কে।
এরপরে ১৮৮৩ তে ফিলাডেলফিয়ার পেনসালভেনিয়াতে ভর্তি হন তিনি। কঠোর চেষ্টায় ১৮৮৬ সালে তিনি সেখানে চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক লাভ করেন। এই সংবাদে চমৎকৃত হয়ে মহারাণী ভিক্টোরিয়া উইমেন্স মেডিকেল কলেজে অভিনন্দন সূচক বার্তা পাঠান।
দুর্ভাগ্য বশত আমেরিকার বিপরীত আবহাওয়া ও প্রতিকূল খাদ্যাভ্যাসের কবলে আনন্দী বাঈ তীব্রভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। নিজের অর্জিত জ্ঞান জনকল্যাণে কাজে লাগাবার আগেই কঠিন বাস্তবতায় তাকে মাত্র ২১বছর বয়সেই ১৮৮৭ সালে ইহলোক ত্যাগ করতে হয়। নিজের জীবন প্রদীপ নিভিয়েও তিনি ভবিষ্যতের নারীদের জন্য পথের আলো জ্বেলে গিয়েছেন।
কেই ওকামি
প্রকৃত নাম নিশহিদা কেইকো। জাপানের তোহুকু অঞ্চলে ১৮৫৮ সালে জন্ম। তার বয়স যখন পঁচিশ তখন তার বিয়ে হয় ওকামি সেনকিরও নামে এক চিত্রশিল্পীর সাথে। এই দম্পতি বিয়ের কিছু দিন পরে আমেরিকা চলে যান।
স্থানীয় একটি চার্চের সহায়তায় কেই ওকামি উইমেন্স মেডিকেল কলেজ অফ পেনসালভেনিয়ায় আসন লাভ করেন। ১৮৮৯ সালে শিক্ষা সমাপ্ত করে জাপানের প্রথম নারী চিকিৎসক হয়ে ফিরে এসে জিকেই হাসপাতালে নিযুক্ত হন। কিন্তু সম্রাট মেইজি শুধু নারী হবার জন্য তার চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। অপমান বোধ করে ওকামি এরপরে হাসপাতাল থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেই ক্লিনিক খোলেন এবং স্ত্রী রোগ ও যক্ষ্মার চিকিৎসা দিতে শুরু করেন।
কর্মজীবনের অবসরের পরে এক বন্ধুর সাথে মিলে শুধু মহিলাদের জন্য একটি হাসপাতাল ও একটি নার্সিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই মহিয়সী চিকিৎসক স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪১ সালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন।
সাবাত ইস্লামবুলি
সিরিয়ার প্রথম নারী চিকিৎসক সাবাত ইস্লামবুলির জন্ম এক কুর্দিস ইহুদি পরিবারে। ইতিহাস হতে সাবাতের সম্বন্ধে তার বিদ্যায়তনের পুঁথির বাইরে কিছু জানা যায়নি। ১৮৯০ সালে পেনসালভেনিয়া থেকে চিকিৎসায় ডিগ্রি অর্জন করে তিনি দামেস্কাসে ফিরে আসেন। ১৯১৯ সালের দিকে তিনি কায়রোতে চলে যান। তিনিও ১৯৪১ সালেই মৃত্যুবরন করেছিলেন।
উইমেন্স মেডিকেল কলেজ অফ পেনসালভেনিয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান যেখানে মহিলাদের পাশ্চাত্য মেডিসিন বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলা হতো। এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল আমেরিকার প্রথম মহিলা চিকিৎসক এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের ডিগ্রি অর্জনের পরবর্তী বছর ১৮৫০সালে। তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষিতে এই প্রতিষ্ঠানে নেটিভ আমেরিকান, আফ্রিকান, মধ্য প্রাচী ও ভারত হতে বিদ্যার্থীরা সমাজের ও দেশের বহু বাঁধা বেরিয়ে গিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নততর জ্ঞান অর্জন করতে।
সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।