ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার যে চুক্তি সরকার করেছে, তাতে ‘দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে’ বলে মনে করে বিএনপি; এই চুক্তির ‘ভাগ কে কে পাচ্ছে’, সে প্রশ্নও তুলেছে দলটি।
উন্নয়নের কথা বলে আওয়ামী লীগ ‘বর্গিদের মত দেশ লুট’ করছে বলে অভিযোগ করেছে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা দলটি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা এবং এবং বিদ্যুত-গ্যাস-দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে ‘যুগপৎ আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর গোপীবাগে ‘নীরব পদযাত্রা’ কর্মসূচির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে বিদ্যুতের কি অবস্থা! আমি প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে কিছু লুটেরার সঙ্গে আঁতাত করে একটা সরকার কীভাবে একটা দেশকে লুট করতে পারে, তার একটা প্রমাণ ওই আদানি নাকি প্যাদানি একটা আছে।
“শুনছেন না, ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে তাকে। এক লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা ২৫ বছরে। বিদ্যুৎ দিক বা না দিক। আরে ভাই শ্বশুর বাড়ি আরকি, যেমনি খুশি তেমনি নিয়া যাইব।”
“কার সঙ্গে এই চুক্তি করেছে? ভারতীয় সরকারের সঙ্গে নয়, একজন সাধারণ বাটপারের সঙ্গে এই কাজটা করল।”
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগ ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে একটি ক্রয় চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় আদানি ঝাড়খণ্ডে ১৬০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।
ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আগামী মার্চ নাগাদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ পাবে বলে গত মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ২৫ বছরের মেয়াদে এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হবে।
তবে বিদ্যুৎ আসার আগে আগে কয়লার দাম নিয়ে শুরু হয়েছে মতবিরোধ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আদানি পাওয়ারকে চিঠি লিখে বলেছে, আদানি গ্রুপ প্রতি টন কয়লার দাম নির্ধারণ করেছে ৪০০ ডলার, যা আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বেশ বেশি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম টন প্রতি ২৫০ মার্কিন ডলারের মত। সুতরাং চুক্তির কয়লার দাম পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
কয়লার দাম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা আব্বাসও। তিনি বলেন, “তার (আদানি গ্রুপ) ইন্দোনেশিয়ায় কয়লার খনি আছে। সেই কয়লার খনিতে কয়লার দাম হল দুইশ টাকা। বাংলাদেশের এই বিদ্যুতের জন্য কিনতে হবে চারশ টাকা দিয়ে। বাকি টাকা কোথায় গেল? কে কে ভাগ করছে? এই ভাগ কে কে পাচ্ছে আমরা জানতে চাই না।”
এদিন রাজধানীতে বিএনপির দুইটি পদযাত্রা হয়। মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে গোপীবাগ ওয়াক্তিয়া মসজিদের সামনের সমাবেশ করে বিকাল ৪টায় শুরু হয় একটি যাত্রা। মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হল, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল মোড়, রায়সা বাজার মোড় হয়ে নয়াবাজারে নবাব ইউসুফ মার্কেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সেটি শেষ হয়।
মহানগর উত্তরের উদ্যোগে অপর পদযাত্রাটি হয় উত্তরার কবি জসিম উদ্দিন সড়ক থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার পথে। এতে নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দুইটি কর্মসূচিতেই বিএনপির পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই সময়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কারওরান বাজার থেকে এবং গণফোরাম-পিপলস পার্টি মতিঝিলের ইডেন কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পদযাত্রা করে।
২০ দলের সাবেক শরিকদের জোট ‘সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট’ সকালে বিজয়নগরের আল-রাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে এবং ‘পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট’ পুরানা পল্টন থেকে থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত কর্মসূচিটি পালন করে।
‘আওয়ামী লীগ বর্গির দল’
অষ্টাদশ শতকে ১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত দশ বছর ধরে অশ্বারোহী মারাঠা সৈন্যদল বাংলায় যে লুটতরাজ চালিয়েছিল, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেই সেনাদল ‘বর্গি’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল এবং তাদের সেই অভিযানের কারণেই বাংলা অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ধারণা করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্গিরা আগে যেভাবে আসত … আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই বর্গীর দল। যখনই তারা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে সব লুট করে নিয়ে চলে যায়। এটা আর আমরা হতে দিতে পারি না।”
তিনি বলেন, “আজকে এমন চুরি করেছেন যে, এখন ব্যাংকে টাকা নাই। ডলার নাই। এলসি খুলতে পারে না, জিনিসপত্র আনতে পারে না। চুরির একটা সীমা আছে এরা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।”
বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে দলের অবস্থান আবার তুলে ধরেন ফখরুল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে ‘নিশ্চয়তা’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়ে যাচ্ছেন, তা ‘হাস্যকর’।
তিনি বলেন, “ঢাকার লোক আপনারা, ঘোড়াও যে হাসে জানেন তো? কখন হাসে জানেন? যখন ওই ধরনের কথা শুনতে পায়, যে বিদেশি আসছে সেখানে বলতেছেন প্রধানমন্ত্রী যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকারের অধীনে খুব ভালো নির্বাচন হবে, সবাই অবাধে ভোট দিতে পারবে। ঘোড়াও হাসতে শুরু করেছে এই কথা শুনে।