ইভ্যালির গুদামে এখনও ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে বলে দাবি করেছেন কারাগার থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়া শামীমা নাসরিন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এর মধ্য থেকে গ্রাহকদের অর্ডার করা পণ্য দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তার আগে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ পেতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আর সেই জন্য স্বামী মোহাম্মদ রাসেলের মুক্তি চাইছেন শামীমা। রাসেল এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিয়ন্ত্রণকর্তা ছিলেন। তখন শামীমা ছিলেন চেয়ারম্যান।
গ্রাহক ঠকানোর একের পর এক অভিযোগের মুখে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে ২০২১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ঢুকতে হয়। শামীমা গত এপ্রিল মাসে জামিনে বের হলেও রাসেল এখনও বন্দি।
এদিকে তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইভ্যালির দায়-দেনার হিসাব এবং একে সচল করার উপায় বের করতে একটি পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল হাই কোর্ট।
সেই পর্ষদ দায়িত্ব শেষ করে বিদায় নেওয়ার পর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন শামীমা, তার ১৫ দিন পর বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
৮ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন শামীমা।
তিনি আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে আদালতের নির্দেশনা ও ইকমার্স নীতিমালা মেনে নতুন একটি সার্ভার চালু করে পুনরায় ব্যবসা শুরুর ঘোষণা দেন।
গ্রাহকদের অর্ডার করা যে পণ্য আটকে আছে, তারা তা কবে পাবে- এই প্রশ্নের উত্তরে শামীমা বলেন, “আমাদের গোডাউনে প্রায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। এই পণ্য দিয়ে অতীতের সব দায় মেটানো প্রায় অসম্ভব৷
“তবে এইটুকু পণ্য দিয়ে যতটা সুষম বণ্টন সম্ভব, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে পণ্যগুলো সার্ভার অন করার সাথে সাথে ডেলিভারি করা হবে। এই বিষয়ে আমরা মহামান্য হাই কোর্ট এবং বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করব।”
গ্রাহকের পণ্য ও টাকা ফেরতের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে শামীমা বলেন, ইভ্যালির সার্ভারে লেনদেনের সব তথ্য রেকর্ড করা আছে। কিন্তু পাসওয়ার্ড হারিয়ে যাওয়ার কারণে রাসেল ছাড়া কারও পক্ষে সেটা উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
“আমরা বিকল্প নানা উপায়ে চেষ্টা করেছি। পুরোনো সার্ভার পাওয়ার জন্য রাসেলকে প্রয়োজন। পাসওয়ার্ডের কথা বলা হচ্ছে সেটা মেমোরাইজ করা যাবে এমন না। সেটা রিকভারি করতে হলেও অনেকগুলো প্রসিডিউরের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সেজন্য আমরা আদালত ও বোর্ডের সাথে আলোচনা করে যে কোনো শর্তে রাসেলের জামিনের আবেদন করব।”
আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনে নিবন্ধিত ইভ্যালির সার্ভার। তাতে ঢুকতে না পেরে আদালত গঠিত পর্ষদও ইভ্যালির দেনা-পাওনার হিসাব চূড়ান্ত করতে পারেনি। ইভ্যালির কাছে গ্রাহক-মার্চেন্টের পাওনা হাজার কোটি টাকার বেশি।
গত বছর গ্রেপ্তার হওয়ার সময় ইভ্যালি কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং যাওয়ার সময় তা অরক্ষিত অবস্থায় রেখে যাওয়ার সমালোচনা করেন শামীমা।
দেনা পরিশোধ কবে থেকে?
এই প্রশ্নের উত্তরে শামীমা বলেন, “আমাদের দেনা পরিশোধ করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ৷ একটি যথাযথ পরিমাণে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ অনুযায়ী, ইভ্যালি মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ তোলার সক্ষমতা রাখে৷ বর্তমানে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ পেতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিজনেস করে বিনিয়োগকারীদের এটাকে একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উপস্থাপন করা।
“আমরা প্রথম দিন থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইভ্যালিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরার যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, আগামী ১ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করতে পারলে প্রথম বিনিয়োগ থেকেই সব দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।”
গেটওয়ের ২৬ কোটি টাকা কখন ফেরত?
এ প্রশ্নের উত্তরে শামীমা বলেন, “সরকারের এস্ক্রো নীতিমালা প্রণয়নের শুরু থেকেই নিয়ম মেনে পণ্য সরবরাহ শুরু করে ইভ্যালি। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করার পরবর্তী সময়ে এটি অনুসরণ করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় এবং সরবরাহ করে আমরা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হই। পেমেন্ট গেটওয়েতে টাকা জমার পর পণ্য ডেলিভারি করা হতো এবং গ্রাহক পণ্য বুঝে পেলে তবেই ডেলিভারিকৃত পণ্যের অর্থ, যাচাই পূর্বক গেটওয়ে কোম্পানি থেকে আমরা বুঝে পেতাম।
“গ্রাহকদের কত টাকা আমাদের গেটওয়েতে আছে, সেটি জানতে আমাদের সার্ভার অবশ্যই প্রয়োজন। তাই সার্ভার ওপেন হওয়া মাত্রই দ্রুততম সময়ের মধ্যে গেটওয়ের অর্থ ফেরত দেব। সার্ভার ওপেন করতে আমাদের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে প্রয়োজন।”