ইতিহাসের কিছু ভয়ংকর নরখাদক


শবনম জাবীন জেবা | Published: September 16, 2022 16:31:26 | Updated: September 17, 2022 12:33:36


ইতিহাসের কিছু ভয়ংকর নরখাদক

সেই ১৯৭৫ সালের ঘটনা। ‘দৈনিক বাংলার’একটি খবরে উঠে আসে এক ভয়ংকর তথ্য। যারা সেইসময় খবরটি পড়েছিলেন, তারা হয়তো খানিকটা আতঙ্কিত হয়েছিলেন এই ভেবে যে, “এই যুগে এসেও ‘নরখাদকদের’অস্বিত্ব রয়েছে, তাও আবার খোদ বাংলাদেশে!”

খলিলুল্লাহ নামের এক নরখাদকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। তিনি মৃত মানুষের মাংস ও কলিজা খেতেন। দৈনিক বাংলার এক প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “এক ডোম তার বন্ধু এবং সেই বন্ধুই তাকে মর্গে থাকা লাশের মাংস খাওয়ার সুযোগ করে দেয়।”

তাকে লালবাগ এলাকার আশেপাশে দেখা যেত এবং জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছিল তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। তবে এর বেশিকিছু তিনি আর বলতে পারেননি।

এই খবরটি প্রকাশের পর তাকে আইনের আওতায় আনা হয় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তিনি একজন অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি ছিলেন। ২০০৫ সালে এই খলিলুল্লাহ নরখাদক মৃত্যুবরণ করে।

এতো গেলো বিশ্বের মানচিত্রের ছোট্ট একটি ব-দ্বীপের এক নরখাদকের কথা। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নরখাদক। এমনকি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডেও সর্বোচ্চ মনুষ্য ভক্ষণকারী হিসেবে এক নরখাদকের নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। বিষয়টি কিন্তু মোটেও সুখকর নয়!

রূপালী পর্দায় চিত্রায়িত নরখাদকের কর্মযজ্ঞের দৃশ্যগুলো আমাদের পেটের ভেতরে অদ্ভুত একটা অনুভূতির সৃষ্টি করে যা বমিতে এসে পরিণতি পায়। একবার ভাবুন তো, এরকম একটা দৃশ্য যদি বাস্তবে দেখতে হয় বা এমন একটা মানুষ যদি হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায়! থাক, সে ভাবনায় আর না যাই।

গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডের তথ্য অনুযায়ী, উনিশ শতকের দিকে ফিজি দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী গোষ্ঠীর তৎকালীন সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রে প্রায় ৮৭২ থেকে ৯৯৯ টি মনুষ্য ভক্ষণ করে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর নরখাদক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিলেন। কথিত আছে তিনি মানুষের শরীরের পুরোটাই খেয়ে ফেলতেন; কখনো একদিনে খেতে না পারলে রেখে দিতেন, পরেরদিন বাকিটা সাবাড় করে ফেলতেন।

আরো কথিত আছে যে, শিকার ভক্ষণের পর তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে তিনি একটি করে পাথর সাজিয়ে রাখতেন। মানুষ কতই না বৈচিত্র্যময়!

এছাড়াও রয়েছে এমন কিছু নরখাদকের পরিচিতি যারা নৃশংস মানব ভক্ষণের জন্য হয়েছেন সমালোচিত ও নিন্দিত।

জেফরি ড্যাহমার

জেফরি ড্যাহমার আমেরিকার অন্যতম নরখাদক ও একজন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। এছাড়াও তার ছিল বিকৃত যৌন রুচি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৭ টি খুন করেছিলেন। মৃত মানুষের সাথে যৌনাচারে লিপ্ত হওয়া এবং তাদের মাংস ভক্ষণ করা তার এক নেশায় পরিণত হয়েছিল। তার আজীবন পাপকাজের জন্য তাকে ১৬ টি মৃত্যু দন্ডাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কারাগারে বন্দী থাকাকালীন ১৯৯৪ সালে অন্য এক কয়েদির উপর্যুপরি পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়।

নিকোলি জুমাগালিভ

নিকোলি কাজাখস্তানের একজন অধিবাসী। তিনি নিজ মুখে ১০ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করলেও প্রশাসনের মতে নিকোলি এর চেয়েও অনেক বেশি খুন করেছেন। নারীদের প্রতি তার ছিল চরম বিদ্বেষ ও ঘৃণা।

তিনি সাধারণত নারীদের আক্রমণ করতেন এবং অস্ত্র হিসেবে কুড়াল ব্যবহার করতেন। নারীদের শরীরের রক্তসহ বাকি সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিনি ভক্ষণ করতেন। এমনকি তার বাড়িতে বন্ধুবান্ধব কেউ গেলে তিনি অনেকসময় তাদেরকে এসব খেতে দিতেন।

তাকে আটক করার পর শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে ক্রিসমাসের উৎসবের সময় তিনি সেখান থেকে সকলের নজর এড়িয়ে পালিয়ে যান। কে জানে তিনি এখন কোথায় আছেন বা কে তার পরবর্তী শিকার হতে চলেছে!

শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি  অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

zabin860@gmail.com

Share if you like