ছবির মতো সুন্দর দেশ ইতালি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে যেন এক স্বর্গরাজ্য। কিন্তু সেখানকার আকর্ষণীয় অফারটির কথা জানলে হয়তো দেশটিতে থেকে যাবারই ইচ্ছা হতে পারে। হ্যাঁ, এই দেশে আছে এমনই এক শহর যেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করলেই পাওয়া যাবে লক্ষ লক্ষ টাকা।
ইতালির একদম দক্ষিণপ্রান্তে পুগলিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এই শহরটির নাম প্রেসিচ্চে। সিএনএনের প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায় শহরটির কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন এই শহরে গিয়ে বসবাস শুরু করলে দেয়া হবে ৩০ হাজার ইউরো, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩১ লক্ষ টাকার কিছু বেশী। আর এই সুযোগটি নিতে পারবেন বিদেশীরাও।
গইতালির প্রেসিচ্চে শহর। সূত্র: সিএনএন
একসময় শহরটির দুই ধার দিয়ে গড়ে ওঠা দালানগুলিতে ছিল অনেক মানুষের বসবাস। শহরটি ছিল প্রাণময়, কোলাহলপূর্ণ। অতীতে এই শহর জলপাই তেল উৎপানের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। ছবির মতো এই শহরটি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র জলপাই বাগানের জন্য একে ডাকা হতো ‘সবুজ স্বর্ণের নগরী’ নামে।
কিন্তু এই শহরটির সেই প্রাণবন্ত রূপ এখন শুধুই অতীত। পুরনো সব বাড়িগুলোর অধিকাংশই জনশূন্য। এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যের সেই সোনালী দিনও এখন আর নেই।
শহরটির কাউন্সিলর আলফ্রেদো পালেসে বলেন, এখানে ১৯৯১ সালের আগে নির্মাণ করা অনেক বাড়ি খালি পড়ে আছে। ওই বাড়িগুলো ক্রয়ের জন্যই অর্থ দেওয়া হবে। কারণ, তারা চান খালি বাড়িগুলো আবার যেন মানুষে ভরে ওঠে।
শহরটির মানুষের জন্মহারও দিন দিন কমে আসছে। একসময়কার ঐতিহাসিক, সুন্দর স্থাপনা আর শিল্পসমৃদ্ধ শহরটির এমন ভগ্নদশা চোখের সামনে দেখা কষ্টকর। আর এইজন্যই এখানে বসবাসের বিনিময়ে অর্থ প্রদানের পরিকল্পনাটি প্রশাসন হাতে নিয়েছে বলে জানান পালেসে।
তবে শর্ত হলো যিনি এই শহরে বসবাস করতে আসবেন তার বয়স হতে হবে ৪০ এর কম । দ্বিতীয়ত ১৯৯১ সালের আগে তৈরি এমন একটি বাড়ি তাকে কিনতে হবে। একইসাথে শহরটির অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে তাকে এখানে একটি নতুন ব্যবসা শুরু করতে হবে।
শহরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর স্থাপত্যশিল্প অতুলনীয়। ছবি: সিএনএন
প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাকা দেয়া হবে দুইভাগে। প্রথম ভাগটা দেওয়া হবে বাড়ি ক্রয়ের সময় আর শেষ ভাগটা দেওয়া হবে বাড়়িতে যদি কোন সংস্কারের প্রয়োজন হয়, সেই সময়।
শহরগুলির আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ২০১৯ সালে প্রেসিচ্চে ও অ্যাকোয়ারিকা নামে দুইটি শহরকে একসঙ্গে যোগ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়। দুই শহরের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৯০০০। এই শহরে বসতি স্থাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হয়েছে আরও নানান পরিকল্পনা। নতুন ব্যবসা শুরু করলে করের উপর বিশেষ ছাড়, সন্তানের জন্ম দিলে বিশেষ বোনাসেরও ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।
এখানে দেখা মেলে আঁকাবাঁকা সরু রাস্তার দুইধারে সোনা রঙা প্রকাণ্ড সব দালান। দালানগুলোর ব্যালকনিতে লোহার কারুকাজখচিত গ্রিল। এছাড়াও বাইজেন্টাইন যুগে তৈরী নানান স্থাপত্য, সমাধিকক্ষ, পাথর নির্মিত গীর্জা, জলপাই বাগান সহ দর্শনীয় নানান স্থাপনা নগরীটিকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়।
প্রেসিচ্চের কাউন্সেলর জানান, আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে বসবাসের আবেদন নেয়া হবে। আগ্রহীরা শহরের টাউন হল ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানতে পারবেন।
নাফিসা ইসলাম মেঘা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।