রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রাশিয়া। কিন্তু কিইভ এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকরা আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে ।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে জানায়, রবিবার রোশিয়া ওয়ান টেলিভিশনে পুতিনের একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।
সে সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘‘একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে আমরা যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি, যদিও এটি তাদের উপর নির্ভর করছে। আমরা আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছি না, তারা দিচ্ছে।”
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল পশ্চিমাদের সঙ্গে এই ভূরাজনৈতিক সংঘাত যদি ভয়ঙ্কর পর্যায়ে চলে যায় তখন কী হবে? জাবাবে পুতিন বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না এটা অতটাও বিপজ্জনক।”
২০১৪ সালে গণবিপ্লবের মাধ্যমে ইউক্রেনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করে পশ্চিমারাই বরং এই যুদ্ধ শুরু করেছিল বলে মনে করেন পুতিন।
ওই বিপ্লবের পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া দখল করে এবং রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো পূর্ব ইউক্রেনের দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
পুতিন বলেন, ‘‘আসলে, এখানে মূল বিষয় হল আমাদের ভূরাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নীতি, যার লক্ষ্য রাশিয়া, ঐতিহ্যবাহী রাশিয়াকে টুকরো করা।”
পশ্চিমারা সেই ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই রাশিয়াকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন পুতিন। বলেন, শেষ পর্যন্ত রাশিয়া পশ্চিমাদের ওই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।
পুতিন রাশিয়াকে ‘অদ্বিতীয় দেশ’ বলে বর্ণনা করে আরও বলেন, দেশের (রাশিয়ার) অধিকাংশ মানুষ একজোট হয়ে রাশিয়ার সুরক্ষা চায়।
“মূল ভূখণ্ডের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক, আমাদের জনগণ মাতৃভূমির সুরক্ষায় তাদের সব কিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আছে। এখানে আমার জন্য তাই কোনো কিছুই অস্বাভাবিক নয়।”
“এটি আবারও আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া একটি অনন্য দেশ এবং আমাদের নাগরিকরা ব্যতিক্রমী মানুষ। এটি ইতিহাস জুড়ে রাশিয়ার অস্তিত্বকে নিশ্চিত করেছে।”
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণত হয়েছে এবং ‘কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস’ এর পর মস্কো ও পশ্চিমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাত।
যুদ্ধ ১১ মাসে গড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই।
ক্রেমলিন বলছে, সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কিইভ বলছে, তাদের ভূখণ্ডের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে রুশ সেনাদের না তাড়ানো পর্যন্ত তারা শান্ত হবে না। এমনকি তারা ২০১৪ সালের যুদ্ধে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ক্রাইমিয়া পুনরুদ্ধারের সংকল্পও করেছে।