কৃষ্ন সাগরের বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানি নিয়ে ইউক্রেইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে হওয়া চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। কৃষ্নসাগরের নৌবহরে ইউক্রেইনের হামলার অভিযোগ তুলে রাশিয়া এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত শনিবার কৃষ্নসাগরে ক্রাইমিয়া উপকূলের সেভাস্তোপোলে রুশ নৌবহরের জাহাজগুলোতে ইউক্রেইনের চালক বিহীন বিমান (ড্রোন) হামলার কারণে শস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
যুক্তরাজ্যের সহায়তায় ইউক্রেইন ওই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে বলেও রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে। এতে শস্য রপ্তানিতে নিয়োজিত জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
তবে ইউক্রেইন এ হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করে বলেছে, রাশিয়া তাদের নিজেদের অস্ত্র সাবধানে ব্যবহার করতে পারেনি।
গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় শস্য রপ্তানি চুক্তি সই করে ইউক্রেইন ও রাশিয়া। এরপর ইউক্রেইন থেকে ৯০ লাখ টন গম, সূর্যমুখী পণ্যসহ ভোজ্য তেল রপ্তানি করা হয়েছিল।
এ চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেইনে রপ্তানির জন্য আটকা পড়ে থাকা শস্য প্রথম রপ্তানি করা শুরু হয় এবং বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দাম কমে আসে। এখন রাশিয়া সেই চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ায় বিশ্বে ইউক্রেইনের শস্য রপ্তানির এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার মুখে পড়ল।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে কৃষ্ণসাগর অবরোধ করেছিল রাশিয়া। তাতেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দামে উল্লম্ফন দেখা দেয়। শস্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেইনের ওপর নির্ভরশীল অনেক দরিদ্র দেশে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। এরপরই আন্তর্জাতিক উদ্যোগে হয়েছিল ওই শস্য সরবরাহ চুক্তি।
প্রাথমিকভাবে চার মাসের জন্য করা এ চুক্তির মেয়াদ আগামী ১৯ নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস একদিন আগেই চুক্তিটি নবায়ন করার জন্য রাশিয়াকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তুতার মধ্যেই ড্রোন হামলার পর চুক্তির নবায়ন নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হল।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় ড্রোন হামলারকথা জানানোর কয়েকঘন্টা পর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভ’-এ চলাচল করা কার্গো জাহাজের নিরাপত্তা রাশিয়া নিশ্চিত করতে পারবে না। তাই রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শস্য রপ্তানি চুক্তির বাস্তবায়ন স্থগিত করা হল।
রাশিয়ার এমন ঘোষণা পর বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান দুজারিক বলেছেন, “কৃষ্ণ সাগর রুটে শস্য রপ্তানির উদ্যোগ ভেস্তে যায় এমন কোনও কর্মকাণ্ড থেকে সব পক্ষেরই বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক প্রচেষ্টা, যা স্পষ্টতই লাখো মানুষের খাবারের সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।”