গণপরিবহন হওয়ার পরও মেট্রোরেলের ভাড়া বাসের তুলনায় বেশি হওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বর্তমান বাস্তবতায় আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে ঢাকায় মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি নয়।
বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাড়ার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা বিবেচনায় নিয়ে ভাড়ার এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে জানায়, মেট্রোরেলে চড়তে প্রতি কিলোমিটারে জন্য ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই হিসাবে দিয়াবাড়ির উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীকে গুণতে হবে ৬০ টাকা।
অথচ রাজধানীতে ডিজেল চালিত বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি একটা কথা ইন-জেনারেল বলি, এখন যে অবস্থা ঢাকা সিটিতে, আপনি উত্তরা থেকে কমলাপুরে আসবেন, ১০০ টাকায়। কত মিনিটে আসছেন? ৩৮ মিনিটে। তাহলে কোথায় লস হল?
“প্রতিটি আনন্দের সঙ্গে যন্ত্রণা থাকে। ভাড়া একটা বিষয়, এটা কখনো জেনারেলি একসেপ্টেবল হবে না, কোথাও। কিন্তু বাস্তবে সবাই একসেপ্ট করবে। মিনিমাম রিকশা ভাড়া এখন ২০ টাকা, এটা কি ভাবেন?”
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের জানান মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। খবর বাসসের।
তিনি বলেন, “আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টায় মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে বিএনপির চার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত এই চার নেতার মধ্যে রয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও মঈন খান।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেলে শিক্ষার্থীদের কোনো হাফ ভাড়া থাকবে না। যারা র্যাপিড পাস কিনবেন তারা ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। তিন ফুটের কম উচ্চতার শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ করলে ভাড়া ফ্রি।
তিনি জানান, আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত চলবে ট্রেন। মাঝের কোনো স্টেশনে আগামী তিনমাস যাত্রী ওঠানামা করানো হবে না।
সড়কপরিবহনমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশার বাতিঘর, সাহসের বর্ণিল ঠিকানা, রূপান্তরের রূপকার। আশা করছি, আগামী বছর ডিসেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ এবং ২০২৫ সালে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল অংশের উদ্বোধন করা যাবে।”
তিনি জানান, “এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার (২১,২৬ কিলোমিটার)। এর ব্যয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। মেট্রোরেলের স্টেশন সংখ্যা ১৭টি।”
স্টেশনসমূহের মধ্যে রয়েছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল এবং কমলাপুর। ঘণ্টায় ৬০ হাজার ও দৈনিক ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে মেট্রোরেল।
ওবায়দুল কাদের জানান, আপাতত ৬ কোচবিশিষ্ট ২৪ সেট চালু থাকবে। তবে ভবিষ্যতে ৮ কোচে উন্নীত করা যাবে। মাঝের চারটি কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন, ট্রেইলর কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। ৬ কোচবিশিষ্ট মেট্রোরেলে মোট আসন সংখ্যা ৩০৬টি। মাঝের চারটি কোচের প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ৫৪টি, ট্রেইলর কোচের প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ৪৫টি।