“হিউস্টন, উই হ্যাভ এ প্রবলেম!”
কথাটি ‘অ্যাপোলো ১৩’ সিনেমায় বলেন অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ওই সিনেমায় পরিচালক রন হাওয়ার্ড দেখিয়েছেন অক্সিজেন ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণের ফলে কীভাবে বদলে গিয়েছিল ১৯৭০ সালের ওই চন্দ্রাভিযান পরিকল্পনা।
চাঁদে নামতে না পারলেও ওই অভিযানই এতোদিন ধরে রেখেছিল পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে যাওয়া মানববাহী কোনো নভোযানের রেকর্ড।
সে রেকর্ড ভেঙেছে আর্টেমিস ১। তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২২।
নভোচারী পাঠানোর উদ্দেশ্যে তৈরি কোনো নভোযানের সবচেয়ে দূরের পথ পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড এখন আর্টেমিসের ওরিয়ন স্পেসক্র্যাফটের কব্জায়।
শনিবার নিউ ইয়র্ক স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল ৮:৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭:৪০ মিনিট) এই রেকর্ড করে ওরিয়ন। সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১৭ মিনিট) পৃথিবী থেকে প্রায় চার লাখ এক হাজার সাতশ ৯৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল এটি।
“আর্টেমিস ১ মিশনের নকশা হয়েছিল ওরিয়নের সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে। আর দূরবর্তী কক্ষপথে ক্যাপসুলের পরিক্রমণকে এর সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে বিবেচনা করেছি আমরা।” --বলেছেন ওরিয়নের ব্যবস্থাপক জিম গেফ্রি।
“চাঁদ থেকে অনেক দূরে ও দীর্ঘ এক কক্ষপথে অ্যাপোলো ১৩’র রেকর্ড ভাঙার ঘটনা ঘটে গেছে। তবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল অনুসন্ধানের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া ও মহাকাশযানকে এমন দূরে পাঠানো, যেখানে আমরা আগে কখনও যাইনি।”
এই রেকর্ড ভাঙতে পারত, এমন সকল মিশনের মধ্যে আর্টেমিস ১’ই যে রেকর্ডটি ভেঙেছে সেটি খুবই উপযুক্ত একটি বিষয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মহাকাশ যাত্রায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করা অ্যাপোলো ১৩’র মূল পরিকল্পনায় ছিল না। মিশন চলাকালে অক্সিজেন ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটায় একে ভূপৃষ্ঠে ফেরানোর নতুন পরিকল্পনা সাজাতে বাধ্য হয় নাসা। এর ফলেই, পৃথিবী থেকে প্রায় চার লাখ একশ ৭১ কিলোমিটার দূরে পাড়ি জমানোর রেকর্ড করেছিল মহাকাশযানটির ‘ওডিসি’ ক্যাপসুল।
অ্যাপোলো ১৩’র চন্দ্রযান অ্যাকুয়ারিয়াসে সীমিত অক্সিজেন সরবরাহ থাকায়, একে যত দ্রত সম্ভব পৃথিবীতে ফেরাতে চেয়েছিল নাসা।
নভোচারী জিম লাভেল, জ্যাক সুইগার্ট ও ফ্রেড হাইসের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মহাকাশযানটির বিদ্যুৎ প্রকৌশলী আর্তুরো ক্যাম্পোস।
তিনি একটি জরুরী পরিকল্পনা লিখে পাঠান, যা পৃথিবীতে ফিরে আসার পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিয়েছিল মহাকাশযানের ‘কমান্ড অ্যান্ড সার্ভিস মডিউল’কে। প্রয়াত আর্তুরোর নামেই একটি ডামি পুতুল বহন করছে আর্টেমিস-১।
এই সপ্তাহের শুরুতে, চাঁদের ‘পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার’ কার্যক্রম সম্পন্ন করে ওরিয়ন। এক সময় চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে কেবল ৮১ মাইল ওপরে অবস্থান করছিল আর্টেমিস ১। চাঁদের অর্ধেক কক্ষপথ পরিক্রমণের মধ্যেই বাউলি কেটে আবার পৃথিবীর দিকে ফিরে আসবে এটি।
ডিসেম্বরের ১১ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের স্যান দিয়েগো উপকূলে অবতরণ করার কথা রয়েছে ওরিয়নের।